Dollars Trilogy ( 1964-66) রিভিউ

Dollars Trilogy ( 1964-66)-cinemabaaz.xyz

Share This Post

🎬 Movie ⭕ Dollars Trilogy ( 1964-66)

১৯৪৩ সালে প্রথম মুক্তি পায় এক ভিন্ন ধরণের ওয়েস্টার্ন জনরার মুভি The Boy in The West। শুরুটা তেমন জমকালো না হলেও ধীরে ধীরে বর্ণাঢ্য হতে থাকে এই ধারা৷ ৬০ এর দশকে এসে ধারাটি পূর্ণাঙ্গতা পায় সার্জিও লিওনের হাত ধরে। এই ধারার ফিল্মগুলোর কোনো নির্দৃষ্ট ভাষা ছিল না। কখনো স্প্যানিশ, জার্মান বা ইংলিশ। তবে বেশিরভাগ সময় ইতালিয়ান ভাষাই ছিল এর প্রাণ। আমেরিকান এবং অন্যান্য ক্রিটিকরা একে প্রথম নাম দেয় স্পাগেটি ওয়েস্টার্ন জনরা৷ এই জনরায় শুধু ওইসব ওয়েস্টার্ন ফিল্মগুলোই প্রাধান্য পায় যেগুলো নির্মিত হয়েছে হলিউডের বাইরে৷ বেশিরভাগ অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক ইতালিয়ান, স্প্যানিশ বা জার্মানরাই হতো৷ তবে আমেরিকানদের প্রাধান্যও কম ছিল না৷ ১৯৬৪ তে সার্জিও লিওনের পরিচালনায় স্পাগেটি ওয়েস্টার্ন জনরায় নির্মিত হয় তিনটি মুভি।

A Fistful of Dollars ( 1964)
For a Few Dollars More (1965)
The Good The Bad and The Ugly (1966)

মুভিগুলোতে মূল চরিত্রে অভিনয় করে বিখ্যাত হয়ে আছেন ক্লিন্ট ইস্টউড। তিনটি মুভি ডলার’স ট্রিলজি বা ব্লাড মানি ট্রিলজি অথবা ম্যান উইথ নো নেম ট্রিলজি হিসেবেও পরিচিত৷ মুভিগুলোর ইংলিশ ভার্সন ডিস্ট্রিবিউট করেছে United Artist। অরিজিনাল ইতালিয়ান ভার্সনের দায়িত্বে ছিল Unidis and PEA

মাথায় বাঁকানো হ্যাট, পোড় খাওয়া চেহারা, চোখে তীক্ষ্ণ নজর, পুরো চেহারায় খেলা করছে বুদ্ধির ছটা। ঋজু ভঙ্গি, দু পা ফাক করে দাঁড়ানো, হাত দুটো হোলস্টারের আশেপাশে স্থীর।
এমন দৃশ্যের কথা বললে মাথায় একটা জিনিসই খেলে যায়, বুনো পশ্চিমের দূর্ধর্ষ পিস্তলবাজ, বাউন্টি হান্টারস৷

«ম্যান উইথ নো নেম» এর আগমন ঘটে মেক্সিকান বর্ডারের এক ছোট শহরে৷ যে শহরটি দুটি ধনী প্রতিদ্বন্দ্বী পরিবার দ্বারা শাসিত। নিত্যনৈমিত্তিক খুন খারাপির ফলে শহরটির অবস্থা ধ্বজভঙ্গ। বেশিরভাগ বাড়িতেই মহিলারা বিধবা। কারণ তাদের স্বামীরা হয় ডুয়েল ফাইটিং এ মরেছে নাহয় শক্তির লড়াইয়ে৷ যেখানে একটি কথা বা একটি তথ্যই অনেক সময় জীবন মরণের চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়ায় সেখানে দুইপাশের দুই রাইভাল ফ্যামিলির মাঝে ফায়দা লুটার পরিকল্পনা করে দ্য ম্যান উইথ নো নেম! অনিশ্চয়তার ওই শত বিধ্বস্ত পশ্চিমে তার মূল চালিকাশক্তি সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ভবলীলা সাঙ্গ করে দেওয়া… এক শার্প শ্যুটিং৷

প্রথম কিস্তি থেকেই দেখা মিলে চিত্তাকর্ষক এক প্রোটাগনিস্টের। যার বড় গুণ বন্দুক চালনায়। পশ্চিমে টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন। গুলি চালনায় তার যে দক্ষতা, হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে চোখের পলকে গুলি করে দেওয়া! বিষয়টা বড়ই হৃদয়গ্রাহী। পশ্চিম এমনই, হাতের একটা অংশ পিস্তলকে বানিয়ে নিতে হয়৷ অনেকটা কলম ব্যবহার করার মত বা বাড়তি আঙ্গুল থাকার মতই একটা আঙ্গুল এবং সেটাকে তড়িৎ গতিতে ব্যবহার করতে হয়!!

দ্বিতীয় কিস্তিতে দেখা যায় এক কুখ্যাত গ্যাং এর ব্যাংক ডাকাতির জ্বালায় ওয়েস্টার্ন শহরগুলো হাসফাস করছিল৷ না পারছিল তাকে ধরতে না পারছিল তাকে থামাতে। এমতাবস্থায় আবির্ভাব ঘটে আরেক প্রোটাগনিস্টের৷ ব্যাংক ডাকাতকে ধরার জন্য খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখে তার ব্যাপারে আগেই খোঁজ নিয়েছে আরেক হান্টার। ব্যাংক ডাকাতের পরবর্তী চাল কি হতে পারে আন্দাজ করে এল পাসো শহরে উঠে সেই নতুন হান্টার, ওদিকে আগেই গিয়ে বসে আছে দ্য ম্যান উইথ নো নেম।
একদিকে দূর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার আর তার গ্যাং অন্যদিকে দুই বাউন্টি কিলার। সেই ব্যাংক ডাকাত… যার ডুয়েলে আছে দূর্দান্ত হাত!!!

এখানে দেখার মত ছিল দুই বাউন্টি হান্টারের মুখোমুখি হবার দৃশ্যটা।

সার্জিও লিওনের ব্লাড মানির সর্বশেষ ঠিকানা এবং ডলারের এই সুবিস্তৃত জার্নির শেষ স্টেশন প্রোটাগনিস্টকে জড়িয়ে ফেলে এক এন্টি হিরোর বাদানুবাদে। অচিরেই সেই ব্যাক্তিগত বাদানুবাদ গিয়ে দাঁড়ায় দুজনের বাঁচা মরার লড়াইয়ে। তাদের লড়াইয়ে এন্টাগনিস্ট হিসেবে দেখা মেলে সেনাবাহিনীর এক কর্নেলের৷ ভিন্ন ভিন্ন স্বভাবের দ্য গুড দ্য বেড এবং দ্য আগলিকে ধাওয়া করে নিয়ে যায় মরুভূমি, যুদ্ধ পেরিয়ে এক গোরস্থানে, ডলারের সন্ধানে।

যদিও লিওন তিনটি ফিল্মকে ভিন্ন কাহিনী অবলম্বনে বানিয়েছেন কিন্তু বেশিরভাগ কাহিনী এক হওয়াই তা আজ ট্রিলজির রুপ নিয়েছে৷ “দ্য গুড দ্য বেড এন্ড দ্য আগলি” সর্বশেষ কিস্তি হলেও মূলত এ ফিল্মটি অন্য দুটির প্রিকুয়েল৷ কারণ অন্য দুটি ফিল্ম “আ ফিস্টফুল অভ ডলার’স” এবং “ফর আ ফিউ ডলার’স মোর” এ প্রোটাগনিস্টের গায়ে যে চাদরটি দেখা যায় তা শেষ কিস্তির পুরোটা জুড়ে কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায় না৷ কিন্তু শেষ সিনে তাকে চাদরটা পরে থাকতে দেখা যায়৷ একইভাবে শেষ কিস্তির কাহিনী এগিয়েছে যুদ্ধ বিগ্রহের মাঝে, আমেরিকান সিভিল ওয়ার চলাকালীন, যেটা ঘটেছে ১৮৬১-৬৫ পর্যন্ত৷ আর প্রথম কিস্তি “আ ফিস্টফুল অভ ডলার’স” এ গোরস্তানের এক সিনে কবরের ফলকে ১৮৭৩ সাল লেখা দেখা যায়৷

কাহিনীর বিচারে আমি সর্বপ্রথমে রাখব “আ ফিস্টফুল অভ ডলার’স”কেই৷ কারণ অন্য দুটির তুলনায় ব্যাপ্তি ছোট হলেও এর গল্পে আছে বাস্তবানুগ ব্যবহার। এতে এমন কিছুই নেই যা রিয়েলিস্টিক না হয়ে ফিকশনিস্টিক হয়ে যায়! বরং কাহিনীর যথার্থতা থেকে শুরু করে, প্রতিটি ক্লাইম্যাক্স, প্রতিটি অ্যাঙ্গেল সবই পশ্চিমকে বাস্তবিকভাবে প্রতিকায়িত করেছে৷

বাকী দুটো রিয়েলিস্টিক ভাবে পুরোপুরি সফল বলব না তবে ট্র‍্যু ফিকশন! এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই৷ বরঞ্চ সে দুটির ফিকশনই যেন এমনভাবে ফুটে উঠেছে যা হার মানায় বাস্তবতাকেও৷

মাথার হ্যাট থেকে শুরু করে মুখের সিগারেট এবং প্রতিটি ড্রেস আপ ছিল পারফেক্ট, বিশেষ করে কিছু কিছু চরিত্রের মাঝে দেখা যায় স্ট্র হ্যাট, যা তখনকার পশ্চিমে বহুল জনপ্রিয় ছিল।

বুনো পশ্চিম কে ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক দিয়ে আরো উত্তপ্ত করেছেন এন্নো মরিকনে। এত সুন্দর পারফেক্ট মিউজিক আর কোথাও পাব না৷ বিশেষ করে মেইন প্রোটাগনিস্টের সাথে একটা মিউজিক নির্দৃষ্ট ছিল! যারা দেখেছেন তারা বুঝবেন, সে সুরের কত শক্তি আর উচ্ছাস নিহিত আছে তার মাঝে। আধুনিক ফিল্ম জগতে হয়তো মিউজিকের ব্যবহার খুব উন্নত হয়েছে কিন্তু আদিকালের সেই ধু ধু মরুভূমিময় পশ্চিমকে বিকশিত করতে যে মিউজিক এখানে আছে তা আধুনিক অনেক ওয়েস্টার্ন মুভিকেও হার মানায়৷

মুভিগুলো যদিও ডলার কেন্দ্রিক তবু কিছু বিষয় মিস করেছি৷ কাউবয়, রেঞ্চ, আর গরু ছাড়া কি পশ্চিম কল্পনা করা সম্ভব! আর বারে পোকার খেলতে গিয়ে মারামারি না করলে তো কোনো পূর্ণাঙ্গতাই হবে না৷ যদিও বার ফাইট সিন একটা আছে। এবং সেটা বেশ ভালো। তবে শহরগুলোকে ঘিরে কিন্তু বাস্তবে অনেক বাথান, রেঞ্চ গড়ে উঠত। সেগুলো না থাকায় কিছুটা কমতি অবশ্যই ছিল।

প্রতিটি ফাইট সিন এবং ডুয়েল সিনগুলোকে যেভাবে উত্তেজনার মশলায় সুস্বাদু করে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক, তা লিওনের যায়গায় অন্য কেউ হলে এতটা নিখুঁত হত কি না জানি না। কিছু হাস্যরসাত্মক সিন এবং ডায়লগে আর ডুয়েলের রোমাঞ্চকর দৃশ্যায়নে স্ক্রিন প্লে ছিল দারুণ! স্পাগেটি ওয়েস্টার্ন জনরাকে স্বর্ণযুগে নিয়ে যেতে অভিনয়ে যথার্থ অবদান রেখেছেন ক্লিন্ট ইস্টউড। তার সাথে অন্যান্যরাও, বিশেষ করে ইস্টউডের পরে আমি এগিয়ে রাখব জিয়ান মারিয়া ভলন্টে কে। প্রথম দুটি মুভিতে দুটি রোল প্লে করেছেন, দুটিতেই অসাধারণ ছিলেন৷ এছাড়া এলি ওয়ালাশ, লি ভ্যান ক্লিফ এরাও গল্পকে সুন্দর ভাবে চরিত্রায়নে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন৷
এভাবেই এ তিনটি ফিল্ম যুগে যুগে হয়েছে অভিনব, রেখেছে ছাপ, সাহায্য করেছে এর ছত্রছায়ায় আরো অনেক ফিল্ম তৈরি করতে। আর দর্শকরা তখন যেমন, ঠিক এখনো তা দর্শনে হচ্ছে চিরমুগ্ধ!!!

Director : Sergeo Leone
Genre : Western, Spaghetti Western
Cast : Clint Eastwood, Gian Maria Volonte, Lee Van Cleef, Ella Wallach
Language : English, Italian
Country : Italy, Germany, Spain, West

@ Rashan Faredi

অন্যান্য ব্লগ পড়তে ভিজিট করুন

More To Explore

Defiance (2008) মুভি রিভিউ

🎬 Defiance (2008)🔰 Genre: War, Drama🔰 Director: Edward Zwick🔰 Actors: Daniel Craig, Liev Schreiber, Alexa Davalos, Jamie Bell🔰 Runtime: 2h 17m🔰 IMDB: 7.2 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

Read More »
Sahaj Paather Gappo (2016)-cinemabaaz.xyz

এই শ্রেণিবৈষম্য, হাসি-কান্না, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ সহ অসংখ্য বিষয় খুব সহজেই আপনাকে শেখাবে এই “সহজ পাঠের গপ্পো”

আমাদের নেমন্তন্ন করবে তো ঠাকুর? তাইলে তখন কেনো কইলো না! মাটির দেয়ালে মাঝের জানালা দিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে ছোটুর জিজ্ঞাসা। শৈশবের গল্প। গ্রামবাংলার গল্প। ভালবাসার গল্প।পার্বণের

Read More »

নিখাঁদ স্বাদের একটি মুভি “খাদ”

🎬 মুভিঃ খাদ (এডভেঞ্চার)⭕ পরিচালকঃ কৌশিক গাঙ্গুলি⭕ অভিনয়েঃ পল্লবী চ্যাটার্জি, অর্ধেন্দু ব্যানার্জী, মিমি চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, সাহেব ভট্টাচার্য, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, গার্গী রয় চৌধুরী⭕দৈর্ঘ্যঃ ২ ঘন্টা

Read More »

দি আইরিশম্যানের স্কোরস্যাসির সব ক্লাসিকগুলোর ন্যায় হয়ে যাবে চির-উজ্জ্বল হীরক

সিনেমার নেশা ধরার পর থেকে দু’হাজার সাত এর পরে দু’হাজার উনিশের মতো অনন্যসুলভ একটি বছরের সাক্ষী হতে পেরেছি। উভয় বছরই মাস্টারপিস সব ফিল্মে করেছে টইটুম্বুর।

Read More »

Short Review Of All Quentin Tarantino Films in Bengali

হলিউডের অন্যতম সেরা ও প্রভাবশালী ডিরেক্টর কুয়েন্টিন ট্যারেন্টিনো। চলচ্চিত্র তৈরির অদ্বিতীয় শৈলীর ঐশ্বর্যে তিনি সিনেমা ভক্তদের সহজেই আকৃষ্ট ও বিমোহিত করে আসছেন। ট্যারেন্টিনো মূলত সুপরিচিত

Read More »