Ala Vaikunthapurramuloo (2020)
☞ ‘Ala Vaikunthapurramuloo‘ ‘আলা বৈকুন্ঠপুরামুলো’ এই শব্দের অর্থ হলো ‘স্বর্গীয় বাড়িতে..’। অনেকে হয়তো এই নাম দেখে মনে করতে পারেন যে এখানে আধ্যাত্মিক কিংবা ধর্মীয় বিষয় আছে৷ না…এখানে স্বর্গীর বাড়ি বলতে নিজের বাড়িকে বাড়িকে বোঝানো হয়েছে যেখানে একজন মানুষ জন্ম নেয়ার পর ছোট থেকে বড় হয়, তার পরিবার অর্থাৎ বাবা-মা, ভাই-বোন এবং অন্যান্য আত্নীয়স্বজনদের সাথে হেসে খেলে জীবন কাটাতে পারে, যেখানে নেই কোন বাধা, নেই কোন নিয়মের বেড়াজাল, আছে স্বাধীনতা। সাধারনত একজন মানুষের কাছে তার নিজের বাড়ি স্বর্গের সমতুল্য। তাই ‘আলা বৈকুন্ঠপুরামুলো’ নামটা যথার্থ এবং সুন্দর।
.
☞ মুভিটার কাহিনি প্রসঙ্গে আসি। রামচন্দ্র আর বাল্মীকি নামক দুইজন লোক একই সাথে একটা অফিসে যোগ দেয়। রামচন্দ্র অফিসের বস/মালিককে তার কাজের দ্বারা সন্তুষ্ট করে এবং মালিকের মেয়েকে বিয়ে করে নেয় এবং মালিকের সম্পত্তির ভাগ পেয়ে সুখের জীবন কাটানো শুরু করে। এদিকে বাল্মীকি সেই মধ্যবিত্তই থেকে যায় এবং রামচন্দ্রের প্রতি তার হিংসা, ঘৃণা, রাগ জন্ম নেয়। তো যথারীতি সময়ে তাদের সন্তান হয় এবং দুজনেরই ছেলে হয়। কিন্তু হসপিটালে থাকাকালীন সময়ে বাল্মিকি তার ছেলেকে রামচন্দ্রের ছেলের সাথে বদল করে নেয়। তার উদ্দেশ্য নিজের ছেলে রামচন্দ্রের বাড়িতে রাজার হালে থাকবে আর রামচন্দ্রের ছেলে কষ্টে থাকবে। তো এভাবে কাহিনি আগাতে থাক। রামচন্দ্রের ছেলে বাল্মীকির ঘরে কষ্টের মধ্যে বড় হতে থাকে আর বাল্মীকির ছেলে রামচন্দ্রের বাড়িতে আরামে রাজপুত্রের মতো বড় হতে থাকে। এখন রামচন্দ্রের ছেলে কি তার আসল বাড়ি, তার আসল পরিবারকে চিনতে এবং তাদের কাছে যেতে পারবে কি তা জানার জন্য পুরো মুভি দেখতে হবে।
গল্প হিসেবে এটা একদমই এভারেজ এবং গতানুগতিক। এরকম গল্প এ পর্যন্ত অনেক মুভিতেই দেখা গেছে। তবে এভারেজ হলেও গল্পটি সুন্দর।


.
☞ ত্রিবিক্রম আর আল্লু অর্জুন জুটির ৩য় মুভি এটা। এর আগে জুলাই (২০১২) ও সন অফ সত্যমূর্তি (২০১৫) নামক মুভি দুটি দিয়েছিল এই জুটি। এবারের মুভিটা যে আগের দুটা মুভি থেকে ভালো সেটা বলাইবাহুল্য। ত্রিবিক্রম টলিউডের বড় ডিরেক্টরদের একজন। ফ্যামিলি ড্রামা, রোমান্টিক, মাসালা মুভি বানাতে তিনি সিদ্ধহস্ত৷ তবে এই মুভিতে তার ডিরেকশন গতানুগতিকই লেগেছে। এই মুভিতে তিনি তার পূর্বের আত্তারিন্টিকি দারেদি, আ..আ, অগ্নায়াথাভাসি ইত্যাদি মুভির ফ্লেবার যোগ করেছে৷ স্ক্রীনপ্লে বেশ গতিময়, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শককে ধরে রাখে তবে এখানে নতুনত্ব নেই। তার ফ্যামিলি ড্রামা মুভিগুলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রথমে সাধারন ভাবে চলবে এবং ক্লাইম্যাক্সে ছোটখাটো কিছু টুইস্ট, ইমোশনাল ড্রামার মাধ্যমে সুন্দর ভাবে শেষ হবে। এই মুভিতেও তাই হয়েছে, নতুনত্ব নেই তবে দেখতে ভালো লেগেছে। সিনেমাটোগ্রাফি, লোকেশন, সেট, কস্টিউম সিলেকশন এবং অন্যান্য টেকনিকাল দিকগুলি বেশ ভালো। আর যেটা না বললেই নয় সেটা হলো মিউজিক ডিরেক্টর এস থামানের মিউজিক। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ আর গানগুলা আউটস্ট্যান্ডিং! কারোর মুভিটা ভালো না লাগলেও গানগুলা ভালো লাগবে আশা করি।
.
☞ না পেরু সুরিয়া (২০১৮) ডিজাস্টার হওয়ার পর প্রায় দুবছর পর কামব্যাক করলো আল্লু অর্জুন এবং সেটা রাজকীয় ভাবেই হয়েছে। তার অভিনয়ের কথা উঠলে বলবো সে তার গতানুগতিক অভিনয়টাই করেছে। তার ক্যারেক্টারটা তেমন শক্তপোক্ত কিংবা চ্যালেঞ্জিং ছিলো না বিধায় এই অবস্থা। তবে তার স্ক্রীন প্রেজেন্স, স্টাইল, ড্যান্স স্টেপগুলা ভালো ছিল। নায়িকা পুজা হেগড়ের করার কিছুই ছিলো না, সে তেমন অভিনয়ও দেখাতে পারেনি, এভারেজ লেগেছে তাকে। এরপর যার কথা না বললেই নয় সে হলো মুরালী শর্মা, তাকেই এই মুভির মেইন ভিলেন বলা যায়। দারুন সাবলীল অভিনয় করেছেন তিনি। তার অভিনয় দেখে মাঝে মাঝে আপনার রাগ হবে আবার হাসি আসবে আবার দয়া হবে। মুভির আরেক ভিলেন সামুথিরাকানও ভালো অভিনয় করেছে তবে তার স্ক্রীন টাইম অনেক কম ছিলো। এছাড়া বাদবাকি সাপোর্টিং কাস্ট যেমন নিভেদা পেথুরাজ, সুশান্ত, জয়রাম, তাবু, নভদিপ, সুনিল, ভেন্নেলা কিশোর ইত্যাদিরা তাদের নিজ নিজ জায়গায় ভালো অভিনয় করেছে।
.


☞ এই মুভির নেগেটিভ দিক অনেক আছে। প্রথমত এর একশন সিনগুলি, একদম ফালতু, উরাধুরা আর স্লো। আরোও ভালো ভাবে কোরিয়োগ্রাফি করা যেতো। এরপর এডিটিং এ সমস্যা, বেশ কিছু ফালতু কমেডি, রানটাইম ২ ঘন্টা ৪২ মিনিট থেকে ১০-১৫ মিনিট কাটা যেতো। অতিরিক্ত সাপোর্টিং কাস্ট, এতজনকে না নিলেও হতো। এছাড়া মুভির গানগুলার সিচুয়েশন অনুযায়ী বসানোটা কিছুটা খাপছাড়া লেগেছে। যেন জোরপূর্বক চলে এসেছে এমনই লেগেছে কিছুটা। আল্লু অর্জুন আর পূজার রোমান্স একদমই জমেনি। এই জিনিসটা হুদাই লেগেছে। অবশ্য ত্রিবিক্রমের আগের মুভিগুলার অবস্থাও এমন।
.
☞ মুভিটা মুক্তির পর অনেকগুলা রেকর্ড গড়েছে। মহেশ বাবুর মুভির সাথে ক্লাশে জিতা, ইন্ড্রাস্ট্রি হিট হওয়া সহ আরোও অনেক রেকর্ডই আছে। আল্লু অর্জুনের হায়েস্ট গ্রোসিং মুভি এখন এটা, এরকমটা দরকারও ছিলো। কিন্তু অনেককে বলতে দেখেছি যে এই মুভি ইন্ড্রাস্ট্রি হিট কিভাবে হয়, এর থেকে কতো ভালো মুভি আছে! তাদের উদ্দেশ্যে বলি প্রথমত এটা টলিউড ইন্ড্রাস্ট্রির মুভি, এখানকার দর্শকরা মাস, ফ্যামিলি ড্রামা ইত্যাদি জনরার মুভিই বেশি দেখতে পছন্দ করে। ভিন্ন ধর্মী, আর্টফ্লিম মুভি এখানে চলেনা বলা যায়। আর সাধারনত মানুষ হলে গিয়ে মুভি দেখে বিনোদনের জন্য, ক্লাস অডিয়েন্সের থেকে মাস অডিয়েন্সের সংখ্যাটাই বেশি সবজায়গায়। তো এই মুভিতে বিনোদনের সব উপাদানই আছে, একশন, ফ্যামিলি ড্রামা সবই আছে এতে। আর সাথে আল্লু অর্জুনের স্টারডমও কাজে দিয়েছে। দর্শকরাও ভালো মতোই গ্রহন করেছে, তাই ইন্ড্রাস্ট্রি হিট হয়েছে। অতএব এটা নিয়ে এতো লাফালাফির কোন কারন নেই।
সবমিলিয়ে মুভিটা আমার কাছে ডিসেন্ট লেগেছে। আহামরি ভালো না আবার একদম খারাপও না। শুধু বিনোদনের জন্য এবং মাইন্ড ফ্রেশ করার জন্য দেখতে বসলে ভালো লাগবে। আর যদি মাস্টারপিস কনটেন্ট, লজিক খোজার জন্য দেখতে বসেন তাহলে এই মুভি দেখার দরকার নেই।
লিখেছেনঃ R.Z. Rayshad
ডাউনলোড লিংক নিচে দেওয়া আছে।
অন্যান্য মুভির জন্য ভিজিট করুন এই লিংকে।