No Smoking (2007)g
জন আব্রাহাম অভিনীত “No Smoking (2007)” সিনেমাটি কেবল দেখলাম এবং গল্পের প্লটটি খুবই মন্ত্রমুগ্ধকর লাগলো! এক বসায় টানা দেখে শেষ করলাম।
খুবই অবাক হলাম জানতে পেরে যে দর্শকরা সেই সময়ে ছবিটি গ্রহণ করেনি এবং বক্স অফিসে এটি সাফল্যের মুখ দেখেনি। কিন্তু অনেকের কাছেই এখন বলিউডের সেরা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের তালিকায় এটা জায়গা দখল করে রেখেছে। মুভিটি সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিল। যদি এই টাইমলাইনে প্রকাশ করা হত, তবে সম্ভবত এটি আন্ধাধুনের মতই প্রচুর উপার্জন করত।
এটি বলিউডের অন্যতম সেরা মাস্টারপিস সাইকোলজিকাল থ্রিলার হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। একেকজন মুভিটির প্লট একেকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, বিশেষ করে নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপ ইচ্ছা করে এমন এক এন্ডিং রেখেছেন যেন আমরা নিজেরাই নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা তৈরী করতে পারি, যাকে এক কথায় ওপেন এন্ডিং বলে। যেরকম ওপেন এন্ডিং আন্ধাধুন মুভিতে ছিলো। যদিও দুটি মুভি সম্পূর্ণই একটি আরেকটি থেকে আলাদা। যারা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই ছবিটি মাস্ট ওয়াচ।


ছবির মূল প্লট: K নামের একজন ধনী ব্যক্তির জীবনে কোনোকিছুর অভাব ছিলো না, শুধু মূল সমস্যা ছিলো সে প্রচুর ধূমপান করতো। যার ফলে তার ভাইয়ের ফুসফুসে সমস্যা ধরা দেয়। অতিরিক্ত ধূমপানে অতিষ্ঠ হয়ে যখন তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে যেতে চাইলো তখন সে কথা দিলো যে সে ধূমপান ছাড়বে। এক বন্ধু তাকে সন্ধান দিলো এক অদ্ভুত রিহ্যাব অর্গানাইজেশনের, যেখানে গেলে প্রতিটি ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়তে বাধ্য। এই রিহ্যাব রহস্যময় ভাবে ধূমপায়ীর জীবনে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ডিটেইলস জানতো। বাকি প্লট জানতে হলে ছবিটি আপনারা জলদি দেখে ফেলতে পারেন। থ্রিলার জেনার আপনাদের পছন্দ হলে এই ছবি আপনাদের হতাশ করবে না আশা করা যায়।


******স্পয়লার এলার্ট (এন্ডিং এক্সপ্লেনেশন)*****
(যারা এখনো ছবিটি দেখেননি কিংবা দেখবেন ভাবছেন, তারা নিচে আমার বাকি লেখাটা skip করতে পারেন)
বিভিন্ন দর্শক এবং ক্রিটিক্স বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই ছবিটির ব্যাখ্যা করেছেন। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আমি যা মনে করি তা হলো ছবিতে যা কিছু ঘটেছিল সবই ছিলো জনের কল্পনা আর স্বপ্নের অংশ যা কিছু তার চরিত্র সম্মুখীন করে। নায়ক তার ভাইয়ের এক কিডনি নষ্ট হওয়া এবং তার স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য নিজের ধূমপানের অভ্যাসকে মনে মনে দোষ দেয়া শুরু করে এবং এগুলো থেকেই জন্ম দেয় বিভিন্ন প্রকারের স্বপ্ন আর হ্যালুসিনেশন দেখা।
জনের স্ত্রী যখন তার ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করানোর জন্য তাকে একটি পুনর্বাসনে ভর্তি করে তখন জন তার ডাক্তারকে (পরেশ রাওয়াল) বাঙালি বাবা হিসাবে দেখতে শুরু করে এবং তাকে নিজের কল্পনাজগতে খারাপ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে। কিছু ভিজ্যুয়ালাইজেশন ইফেক্ট রয়েছে যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে সবই ছিলো তার কল্পনা, অনুরাগ কাশ্যপ ছবিটি বানানোর সময় প্রতিটি ডিটেইলস এর দিকে ভালোভাবে খেয়াল রেখেছেন। গল্পের কাহিনী শুরুই হয়েছিলো যখন জন মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলো। নিজেকে স্বপ্নে বারবার সাইবেরিয়ায় নিয়ে যাওয়া, এবং মাঝে মাঝে কিছু দৃশ্য কেঁপে যাওয়া, এগুলো তারই প্রমাণ করে।


এবং শেষ দৃশ্যে যখন সে তার কাটা আঙ্গুল দেখতে পায়, তা আসলে প্রতীকী ছিল যে সে অবশেষে ধূমপান বন্ধ করেছিলো, কারণ সেই আঙ্গুল দুটি দিয়েই ধূমপায়ীরা ধূমপান করে। যদিও সে ধূমপান বন্ধ করে দিয়েছিল, তবুও মানসিকভাবে শেষ পর্যন্ত জনের চরিত্রটি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। তাই আঙ্গুল বাস্তবে জায়গামতো থাকা সত্ত্বেও সে কল্পনা করে যে তার আঙ্গুল দুটি নেই। আরেকটি জিনিস লক্ষ্যণীয়, এখানে মূল চরিত্রের কোনো পুরো নাম নেই, নাম শুধুই K, অনেকে মনে করে যে K দিয়ে কাহিনীকার এবং নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপ নিজেকে তুলে ধরেছেন, তার নামের শেষ অংশ Kashyap এর প্রথম অক্ষর K দিয়ে শুরু হয়।
সব মিলিয়ে মুভিটি একটি মাস্টারপিস। সাইকোলজি থ্রিলার জেনার যাদের পছন্দ তাদের জন্য এটি একটি মাস্ট ওয়াচ।
লিখেছেনঃ ফারাহ ফারজানা খান
মুভিটির ডাউনলোড লিংক নিচে দেওয়া আছে। চাইলে দেখে নিতে পারেন অসাধারণ মুভিটি।
অন্যান্য মুভির জন্য ভিজিট করুন এই লিংকে।