Parasite (2019)
এ বছর সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রে গোল্ডেন গ্লোব বিজয়ী ছবি Parasite (2019)। প্যারাসাইটের বাংলা অর্থ পরজীবি, পরের অনুগ্রহে যে প্রাণী বেঁচে থাকে। হোস্টের বডি থেকে নিউট্রিয়েন্ট নিয়ে নিজে বেঁচে থাকে। এই সিনেমাও এমনই একটি পরিবারকে নিয়ে যারা অন্যের অনুগ্রহে বেঁচে থাকে। সিনেমাটি সাউথ কোরিয়ার একটি হতদরিদ্র পরিবারের আবর্তে ঘুরতে থাকে। সেমি বেইসমেন্টে বসবাস করা এই পরিবারের সবাই খুবই ট্যালেন্টেড, কিন্তু দারিদ্র্যের বেড়াজালে অসহায়।


বাবা মা ভাই বোনের পরিবারে ভাই কেভিন ইংরেজিতে খুবই ভাল। তার বন্ধু মিন তাঁকে একটি ধনী পরিবারের মেয়ের ইংরেজি টিউটর হতে বলে। টিউটর হিসেব জয়েন করার পর থেকে সিনেমার কাহিনী আনফোল্ড করা শুরু করে। সিনেমার মধ্যে একটি দরিদ্র পরিবারের টিকে থাকার সংগ্রাম, ধনী গরীবের মধ্য বৈষম্য, সমাজে সম্পদের অসম বিন্যাস ইত্যাদি খুব সুন্দরভাবে ফুঁটে উঠেছে। সেই সাথে বিভিন্ন সিম্বলের মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিও উঠে এসেছে এই সিনেমায়। দারিদ্র্যের অসহায়ত্বে তাঁদের লোভ তাঁদের কোথায় নিয়ে যায়- এটাই কাহিনির মূল উদ্দেশ্য।


সিনেমাটি দেখার সবচেয়ে বড় কারণ হতে এর শক্তিশালী কাহিনী। কাহিনী প্রেডিক্ট করা খুবই কষ্টসাধ্য এবং অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। তাছাড়া কাহিনীর গাঁথুনি এত মজবুত যে সাধারণ মানুষ এর সাথে খুব সহজেই নিজেদেরকে রিলেট করতে পারব। মধ্যবিত্তের কাছে যেসবকিছু অর্থহীন, ধনীদের জীবনে সেসব অনেক অর্থবহ। জীবন যেখানে যেমন, তাই একচেটিয়াভাবে কোন পক্ষকে আপনি দোষারোপ করতে পারবেন না। একটা ঘুণে খাওয়া অসম সমাজব্যবস্থার চিত্র যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা দেখে পুঁজিবাদী বিশ্বের যেকোন দেশের সাধারণ মানুষই উপলব্ধি করতে পারবে সিনেমার মাহাত্ম্য।


যদি পারফরম্যান্সের কথা বলি তাহলে সবচেয়ে শক্তিশালী পারফরমেন্স মনে হয়েছে কেভিনের পিতার চরিত্রে অভিনয় করা কাং হো সংকে। ওনার এক্সপ্রেশনে সিরিয়াস ভাব আর কথায় সারকাস্টিক ছোঁয়া একটা ব্যালেন্স বজায় রাখে। মাঝে মাঝে তার চাহনিই অনেক কথা বলে দেয়। তার সম্পর্কে তার মনিব বলেন, মাঝেমাঝেই মনে হয় এই বুঝি সে সীমালঙ্ঘন করবে, কিন্তু সে তা করে না। এর মাধ্যমেই বুঝানো হয়েছে যে যতই আমরা বলি ধনী গরিব সবাই মানুষ; এদের মধ্যেও পার্থক্য সৃষ্টিকারী একটা সীমারেখা আছে৷ এই রেখার অস্তিত্ব সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল, কিন্তু আমরা কেউই তা স্বীকার করতে চাই না। আরেকটি চরিত্র হচ্ছে কেভিনের বোনের চরিত্রের জেসিকা। আমার কাছে মনে হয়, সবচেয়ে সুন্দর এবং ইফেক্টিভ করে এই চরিত্রটা তৈরি করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে পরিবারের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড সদস্য। ম্যানিপুলেশনে ওস্তাদ এই মেয়েটিও দারিদ্রতার কারণে নিজের মেধা ভাল জায়গায় কাজে লাগাতে পারে না। যতটুকু সময় সে স্ক্রীনে ছিল, সবচেয়ে ডমিন্যান্ট অভিনেতা মনে হয় তাকে।


বং জুন হো সম্পর্কে যতই বলি কম হয়ে যাবে। ভাল কন্টেন্ট অনেক ডিরেক্টরের কাছেই হয়ত আসে, কিন্তু এমন গ্রিপিং একটা চলচ্চিত্র তৈরী করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। মাত্র ১০ জনের কাস্ট নিয়ে করা ২ ঘণ্টা ১২ মিনিটের সিনেমায় সবইকেই একটা ব্যাকস্টোরি দিয়েছেন।কোন ক্যারেক্টার হুট করে ইন্ট্রোডিউস করেন নাই। সব চরিত্রই কাহিনীর ইন্টেগ্রাল পার্ট। দুইটা মাত্র টুইস্ট, একটা মাঝপথে যেটা পুরো কাহিনির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আরেকটা শেষে; ক্লাইম্যাক্স মোমেন্টে। কিন্তু দুইটার জন্যই বিল্ড আপ এত দক্ষ, দর্শক ঝাঁকুনি খেতে বাধ্য। সব মিলিয়ে সবদিক থেকেই এই সিনেমাটা ভাল লাগবে সবার। হাইলি রিকমেন্ডেড সবার জন্য। অসংখ্য ক্রিটিকদের বর্ষসেরা দশ ছবির লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে সিনেমাটি। দেখবেন, আশা করি ভাল একটি সিনেমাটিকএক্সপেরিয়েন্স হবে।
লিখেছেনঃ Mahmudur Rahman
মুভিটির ডাউনলোড লিংক নিচে দেওয়া আছে। চাইলে দেখে নিতে পারেন অসাধারণ মুভিটি।
অন্যান্য মুভির জন্য ভিজিট করুন এই লিংকে।