The Witcher (2019)
মাত্রই দেখা শেষ করলাম The Witcher (2019) । কী দেখলাম? কী দেখতে চেয়েছিলাম? প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মিল কতটুকু তা মেপে দেখা যাকঃ
কাহিনী সংক্ষেপঃ
গেরাল্ট অফ রিভিয়া একজন উইচার। মিউটেশন আর ম্যাজিকের মাধ্যমে সৃষ্ট উইচাররা অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা আর অসাধারণ শারীরিক শক্তির অধিকারী। গেরাল্ট পেশায় মনস্টার হান্টার। অর্থের বিনিময়ে দৈত্য-দানো-জন্তু বধ করে। কিন্তু তবুও কেউ উইচারকে পছন্দ করে না। না সাধারণ জনগণ, না রাজা-রাণীরা। তবু প্রয়োজনের সময় ডাক পড়ে উইচারেরই।
সিন্ট্রা নামের রাজ্য আক্রমণ করে নিল্ফগার্ড নামের আরেক রাজ্য। রাণী আত্মহত্যা করেন আর ছোট্ট প্রিন্সেস সিরি প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। মৃত্যুর আগে রাণী ক্যালান্থি নাতনিকে বলে যান ভবঘুরে উইচার গেরাল্ট অফ রিভিয়াকে খুঁজে বের করতে। সেই পারবে ওকে বাঁচাতে কারণ সিরি আর গেরাল্ট- দু’জনের ভাগ্য এক সুতোয় গাঁথা। সিরির উপর নির্ভর করছে গোটা পৃথিবী আর জাদুজগত।
এদিকে উত্থান ঘটে ইয়েনেফার নামের এক মেইজের। কুৎসিত দর্শন বাঁকানো মেরুদণ্ডের এক মেয়ে থেকে হয়ে উঠে অসম্ভব শক্তিশালী জাদুকরীতে। আর ভাগ্যের ফেরে তার দেখা হয় উইচারের সাথে।
সিরি কি উইচারকে খুঁজে পাবে? নাকি তার আগেই সিরিকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে অন্য কেউ? নিল্ফগার্ডের আক্রমণ থেকে বাঁচবে গোটা কন্টিনেন্ট? গেরাল্ট কি খুঁজে পাবে তার ঠিকানা? রক্ত-তলোয়ার-জাদুর দুনিয়ায় পাবে এতটুকু শান্তির খোঁজ?


গেরাল্ট অফ রিভিয়াঃ প্রথমেই বলতে হয় গেরাল্ট চরিত্রে ক্যাভিলকে ১০/১০ দিলেও কম হয়। অনেকের পছন্দ ছিল ম্যাড মিকেলসেন। ম্যাড চমৎকার অভিনেতা, হয়তো উইচার রোলে উৎরে যেতেন। কিন্তু ক্যাভিলকে ছাড়া আপাতত অন্য কাউকেই গেরাল্ট হিসেবে কল্পনা করতে পারছি না। গেমের উইচারের মতোই গম্ভীর, আবেগহীন আর তলোয়ার চালনায় দুর্দান্ত।


ইয়েনেফার অফ ভেঙ্গারবার্গঃ সিরিজে একমাত্র ইয়েনেফারের চরিত্রটাই ডেভেলপ হয়েছে চমৎকার ভাবে। হাফ-এলফ, হাফ-হিউম্যান ব্রীডের কুঁজো, কুৎসিত দর্শন এক ফসল। সেই অবস্থা থেকে তার জার্নিটা খুব সুন্দর ভাবে এগিয়ে গিয়েছে। উইচারের চেয়েও ইয়েনেফারের জন্যই বেশি আকর্ষণ অনুভব করবে দর্শক। অ্যানিয়া চালোট্রা নামের অপরিচিত মুখকে ইয়েনেফার রোলে দেখে মেজাজ খারাপ লেগেছিল। কিন্তু পারফেক্ট কাস্টিং হয়েছে বলা যায়।


প্রিন্সেস সিরিলা অফ সিন্ট্রাঃ উইচার ৩ গেম মুক্তি পাবার পর মেয়ে কসপ্লেয়াররা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল সিরি সাজতে। সেখানে গেমের সিরির বাহ্যিক রূপের সাথে সিরিজের প্রিন্সেস অফ সিন্ট্রাকে মেলাতে পারিনি। তবে সিরিজ দেখার মাঝপথে নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম গল্প অনুযায়ী ঠিকই আছে। আর সিরির ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট ঢের বাকি তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। ফ্রেয়া অ্যালানকেও ভাল লেগেছে সিরি চরিত্রে।


ট্রিশ মেরিগোল্ডঃ কিং ফোল্টেস্টের রয়াল কাউন্সিলের সদ্যসা ট্রিশ মেরিগোল্ডের চরিত্রটা একদমই সময় পায়নি। আর কাস্টও পছন্দ হয়নি। যারা গেম খেলেছেন তারা তো অবশ্যই হতাশ হবেন। রেড হেড সিডাক্টিভ জাদুকরীর বদলে কোঁকড়া চুলের অ্যানা শাফারকে মোটেও নিতে পারিনি। আগামীতে কী হয় দেখা যাক। উইচার ২ গেমে ট্রিশের যে গুরুত্ব ছিল সেই তুলনায় প্রাপ্তি ০%। অবশ্য গল্প কেবল শুরু সেটাও মেনে নিতে হবে। সামনে উইচার-ট্রিশের রিলেশনের কী ঘটে দেখা যাক।


সিরিজের ভিএফএক্স প্রথম দর্শনে একটু লো-বাজেট লেগেছে। কিকিমোরা নামক মাকড়সা সদৃশ জন্তুর সাথে উইচারের যুদ্ধটা বিশ্বাসযোগ্য লাগেনি। এজন্য গেম অফ থ্রোন্সের চোখ ধাঁধানো ভিএফএক্স দেখে অভ্যাসের দোষ দেয়া যায়। স্ট্রিগা নামের নারী দানবের সাথে ফাইটটা অবশ্য ভালই ছিল। তাছাড়া জঙ্গলের পরিবেশটাও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। প্রস্থেটিক মেকআপগুলো ঠিক হলিউড কোয়ালিটির মনে হয়নি। আমার খুঁতখুঁত করার স্বভাবের কারণেই কিনা কে জানে!
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মোটামুটি ভাল ছিল। ওয়ান্স এগেইন, গেমাররা তুলনা করতে গেলে হয়তো এগিয়ে রাখবেন উইচার ২ আর ৩ এর বিজিএমকেই।
The Witcher (2019) সিরিজের টাইমলাইন আগুপিছু করা হয়েছে যাতে গল্পে সামঞ্জস্য রাখা যায়। কারণ এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে যখন সিরি’র জন্মই হয়নি। অবশ্য সেসব ঘটনা পুরোটা দেখালেও আমি আপত্তি করতাম না। স্লো-গতির সিরিজে অসুবিধা হয় না যদি মানসম্পন্ন একটা গল্প ধীরে ধীরে বর্ণনা করা হয়।
ধুম-ধাড়াক্কা অ্যাকশন নেই। অ্যাকশন এসেছে কাহিনীর প্রয়োজনে। ফাইটিং কোরিওগ্রাফি অসাধারণ! এক শটে নেয়া তলোয়ার যুদ্ধের দৃশ্য নজড়কাড়া। গেরাল্ট অবশ্য ম্যাজিক ব্যবহার করেছে হাতেগোণা দুয়েকবার। আরো ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
নেটফ্লিক্স যদ্দুর জানি সাতটা সিজন বের করার প্ল্যান রেখেছে। আরো অনেক গল্প আছে বলার, রক্ত আছে ঝরানোর, আবেগ আছে অনুভব করার, ম্যাজিক আছে চোখ ধাঁধাঁবার। নেটফ্লিক্স আশা করি সামনের সিজনগুলোতে গল্প আরো গুছিয়ে আনবে।
লিখেছেনঃ আশিকুর রহমান
মুভিটির ডাউনলোড লিংক নিচে দেওয়া আছে। চাইলে দেখে নিতে পারেন অসাধারণ মুভিটি।
অন্যান্য মুভির জন্য ভিজিট করুন এই লিংকে।