Psycho (1960) সিনেমা রিভিউ

Psycho (1960)-cinemabaaz.xyz

Share This Post

এক রমণী স্নানঘরে ঝরনার পানি দিয়ে খুশী মনে শরীর ধৌতকরণে মগ্ন। বলতে গেলে শান্তিযুক্ত একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। কিন্তু পিছে দিয়ে অকস্মাৎ মুখ আড়াল করা একজন এসে মেয়েটির শরীরে চাকু দিয়ে অভিঘাত করা শুরু করে। একবার… দুবার…. তিনবার… এভাবে অনবরত কয়েকবার! সুপার ক্লোজ-আপে মেয়েটির চিৎকার করা মুখমণ্ডল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। চিল্লানোর শব্দ ও ছুরিকাঘাতের আওয়াজের সঙ্গে উচ্চনাদ বিশিষ্ট আতঙ্ককারী আবহ সংগীত মিলেমিশে একাকার হয়ে চরম শিহরণ জাগানিয়া অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যায়। খানিক সময় বাদেই দেখা যায় একগাট্টি রক্তের বাথটাবের বহির্গমন ফুটোয় গড়িয়ে পড়তে। নিমিষেই ছিদ্রটা ম্যাচ কাটের মাধ্যমে পরিণত হয়ে যায় বালিকার চোখের পুতলিতে। তাঁর খোলা চোখে লেগে আছে ঘোর ভীতি, কেননা মাত্রই তাঁর ঘটেছে নৃশংস মৃত্যু!



ওপরে যে দৃশ্যের বিশদ বিবরণ দিলাম সেটি ইতিহাসের সবচে আইকনিক হরর সিন। আর সিনটি মাস্টার অব সাসপেন্স খ্যাত আলফ্রেড হিচককের সাইকো ছায়াছবির, যেটি তর্কসাপেক্ষে সর্বশ্রেষ্ঠ ও অসংশয়িতভাবে সর্বকালের সবচাইতে প্রভাবশালী হরর ফিল্ম। মুক্তিকালে সমালোচকদের থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জুটলেও আজ চলচ্চিত্রটি বিপ্লবসাধক শিল্প হিসেবেই সুবিখ্যাত। সাইকোর উদ্ভাবন ছাড়া যে হররের সর্বাধিক সফল উপবর্গ স্ল্যাশারের এত মর্যাদাপূর্ণ হওয়াটা অচিন্তনীয় বলেই প্রতীয়মান হয়।

অন্য কিছু বলার পূর্বে সিনেমাটির পটভূমি সম্পর্কে আলতো ধারণটাই দিয়ে নিই। সাইকোর গাথার আদ্যস্থলেই চোখ পড়ে ম্যারিয়েন ক্রেইনের ওপর, যে বীতস্পৃহ স্বীয় ইচ্ছা মোতাবেক জীবন অতিপাত করতে না পারায়। নিজের কাজের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই বললেই চলে। তাঁর প্রণয়ীও তাঁর সাথে বসতি স্থাপন করতে অক্ষম, কেননা লোকটির বর্তমান স্ত্রী-কে তালাক দিলে যে খোরপোষ দান করতে করতেই ফতুর হয়ে যেতে হবে। তো একদিন ম্যারিয়েনের বস তাঁকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে ব্যাংকে আনামত রাখার দায়িত্ব সঁপে। ম্যারিয়েন প্রলোভন সামলাতে পারেনা, সে টাকাটা নিয়ে বেছে নেয় পলায়নের পথ। এতে অবিলম্বেই তাঁর মধ্যে ব্যাপক ঘাবড়ানি ক্রিয়াশীল হয়। ধরা পড়ে যাওয়ার শঙ্কা ও নয়া জীবন সূচনা করার অধীরতার মাঝে সে ঝুল খেতে থাকে। তবে গাড়ি করে চম্পটের সময় গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পূর্বেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। বাধ্য হয়ে সে আশ্রয় নেয় নিকটস্থ একটি মোটেলে। সেখানের ব্যবস্থাপক নর্মেন বেটস বেশ বন্ধুসুলভ হলেও নর্মেনের মা একেবারেই কঠোর। এরপর যা যা ঘটতে থাকে সেগুলোকে বলা যায় দর্শকদের জন্য ইতিহাসের সাক্ষী হবার স্বরূপ।



এখন সমস্যা হলো হিচকককে নিয়ে যা-ই গুণানুবাদ করতে যাবো, তা ইতঃপূর্বে অগণনীয় মানুষ করেই ফেলেছে। তাঁর আর মাত্র The Birds ও Frenzy শীর্ষক ফিল্ম দুটিকে হররের কাতারে ফেলা যায়। হাতে গোনা এই ক’টা হরর নিয়েই তিনি হয়ে আছেন ইতিবৃত্তের সর্বাপেক্ষা ইনফ্লুয়েনশাল হরর ডিরেক্টর। তাঁর থেকে অকুণ্ঠচিত্তে অনুপ্রেরণা নিয়েছে জন কারপেন্টার, জর্জ রোমেরো, মারিও বাভা, দারিও আর্জেন্তোর মত হরর লেজেন্ডরা। হিচকক তাঁর থ্রিলার ফিল্মগুলো দ্বারাই উত্তেজনাকে যেভাবে তুঙ্গীভবনে নিয়ে যান, তা হরর নির্মাতাদের বশীভূত করে বারংবার তাঁর কাজগুলোকে অধ্যয়ন বা অনুকরণ করার জন্য। নিজের ক্যারিয়ারের সবচে ব্যবসা-সফল ফিল্ম সাইকোতে আলফ্রেড তাঁর অভ্যাসনুযায়ী দর্শকদের ভ্রমের মধ্যে রাখেন। প্রথমে সাসপেন্সে গাদা ড্রামা হিসেবে দৃশ্যমান হলেও সিনেমাটি আচমকা একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে পরিণত হয়ে যায় হরর-থ্রিলারে। কেন্দ্রীয় চরিত্রের মশালটা পূর্বে যার নিকট থাকে সেটাও হস্তান্তর করা হয় আরেক জনের কাছে। গোয়েন্দা-কাহিনীর ভঙ্গিমায় রহস্য উদঘাটনে মরিয়া ভাব হাজির করে আবার নিসে আসা হয় চওড়া আকৃতির টুইস্ট। বেটস্ বাসভবনের অভ্যন্তরে গমন মাত্রই অন্যরকম তিমিরাচ্ছন্ন বাতাবরণ বয়ে আনা হয় এবং সেখান থেকেই কাহিনী কোন অভিমুখে মোড় নেবে বুঝাটা ক্লেশকর হয়ে পড়ে, আর এতেই ভিউয়ারদের বর্মহীন হয়ে খেতে হয় একের পর এক ধাক্কা। সেখানের মোটেলটি ক্ষুদ্রাকার ও অনাড়ম্বর। অপরপক্ষে বাড়িটি দেখতে অশিব, অবরুদ্ধ ও তিমিরাচ্ছন্ন। স্থাপত্য দুটি যেন এতে বসবাসরতদের ব্যক্তিত্বের প্রতিরূপ। বেটস্ আবাসস্থলের ভেতরকার সিঁড়ির ধাপসহ পুরো কাঠামোকেই কাজে লাগানো হয় সমুচিতভাবে।



কাস্টের প্রসঙ্গে বলতে গেলে, অ্যান্থনি পার্কিন্সের বিস্ময়াবিষ্ট করা অভিনয় সেলুলয়েড জগতে ইতোমধ্যেই অমরতা লাভ করেছে। আর জেনেট লি হয়ে গেছেন হররের সবচে নামকরা স্ক্রিমিং কুইন। হিচককের জীবনাবসানের পর সিনেমাটির আরও তিনটি সিক্যুয়েল মুক্তি পেয়েছে যেগুলো স্পষ্টতই অরিজিনাল সাইকোর ধারে কাছের মাহাত্ম্যও অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটি পর্বের দিক-নির্দেশনায় অ্যাক্টর পার্কিন্স নিজেই ছিলেন।

সাইকোতে নিরতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এর অলৌকিক সাউন্ডট্র্যাক। একেবারে প্রারম্ভের ওপেনিং ক্রেডিটস্ সিক্যুয়েন্স থেকেই কিংবদন্তি সুরকার বারনার্ড হারম্যানের মিউজিক বেজে মনে তাৎক্ষণাৎ চপলতা জাগিয়ে তোলে। বারনার্ড হিকচকের সঙ্গে Vertigo, North By Northwest সহ আরও কয়েকটি ফিল্মে কাজ করার সঙ্গে Citizen Kane, Taxi Driver, Cape Fear এর ন্যায় বেশিকিছু কালজয়ী চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। সাইকোতে পহেলা পর্যায়ে মেলোডি প্রধানত এক নারীর মনের অবস্থার গতিবিধিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। পরে প্রয়োজন মোতাবেক পরিবর্তনশীল হয়, সময়ে সময়ে গায়েবও হয়ে যায়, আর খুনের দৃশ্যে এর উৎকৃষ্টতা চরমাবস্থায় পৌঁছে লক্ষণীয়ভাবে শ্রবণবিবরে ধরা দেয়।



হিচকক সিনেমাটির স্টেজিং ও ক্যামেরার অবস্থানস্থল থেকে আরম্ভ করে আলিঙ্গনাবদ্ধ প্রতিটি পরিকল্পনাই যেন নিয়েছেন দর্শকদের অভিনিবেশ পাওয়ার একান্ত অভিপ্রায়ে। তাঁর এই চলচ্চিত্রে বাস্তব জীবনের এড গিন নামক নরহত্যাকারী অবলম্বনে দাঁড়া করানো ভিলেনটি অত্যুত্তমভাবে উপস্থাপনা গায়ে কাঁটা লাগিয়ে দেয়। অন্তিমে খলনায়কের ভুতুড়ে অভিব্যক্তিগুলোর সঙ্গে অপার্থিব কণ্ঠস্বরে মনোলগ ব্যক্তকরণের প্রত্যক্ষদর্শী হবার পর মনের মধ্যস্থলে হতে থাকে অনুরণন। হিকচক অসামান্য এই সাইকোলজিকাল হররে দর্শিয়েছেন অদৃষ্টপূর্ব শিল্পনৈপুণ্য। সংকীর্ণ বাজেটেই তিনি এমন এক যুগান্তকারী চলচ্চিত্র নির্মাণে সার্থক হয়েছেন যেটা পরিণত হয়েছে স্ল্যাশার জনরার শিকড়ে। সাইকো আজও যতবারই দেখা হোকনা কেন, এর অণিমার সহিত মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াদির বর্ণন, কিংবা উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন অনন্যসুলভ শুটিং টেকনিক, মুগ্ধকরণের সিদ্ধিতে হয়ে ওঠে মাতোয়ারা।

লিখেছেনঃ Yeasin Mehedi

More To Explore

Carnival Row (2019) -cinemabaaz.xyz

Carnival Row (2019) Series Bangla Review

Carnival Row (2019) Series Bangla Review ফ্যে (পরী) দের আবাসস্থল টির্নানক ছিলো ধনসম্পদে পরিপূর্ণ এক জায়গা।এত ধনসম্পদ দেখে স্বভাবতই তা হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করবে এটাই

Read More »
Oldboy (2003)-cinemabaaz.xyz

Oldboy (2003) Movie Bangla Review

Movie: Oldboy (2003) Genre: Thriller/Korean / 18+ Warning Google rating:90% IMDb:8.4/10 PR:9/10 Little Spoiler Warning Oldboy (2003) Movie Bangla Review আমি আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার

Read More »
The Innocent (2021)-cinemabaaz.xyz

𝗧𝗵𝗲 𝗜𝗻𝗻𝗼𝗰𝗲𝗻𝘁 -(𝟮𝟬𝟮𝟭) Movie Review in Bangla

রিভেঞ্জ থ্রিলার গল্প যাদের ভালো লাগে তাদের এই সিরিজ টা অনেক ভালো লাগবে । প্রতিশোধের নেশা মাথায় চেপে বসলে তা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এই সিরিজ

Read More »
Tokyo Trial (2016)-cinemabaaz.xyz

Tokyo trial (2016) Series Bangla Review

আপনি কি কোনদিন দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল/ভোলাতে গেছেন? যদি গিয়ে থাকেন তাহলে সম্ভবত অনেক জায়গায় লঞ্চ টার্মিনালে সম্ভবত এমন লেখা দেখছেন এই লঞ্চ টার্মিনালটা জাপান সরকারের সহায়তায়

Read More »
Salman Shah-cinemabaaz.xyz

চিত্রনায়ক সালমান শাহ মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

চিত্রনায়ক সালমান শাহ মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ অভিনেতা ও মডেল তার প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। টেলিভিশন

Read More »