হলিউডের অন্যতম সেরা ও প্রভাবশালী ডিরেক্টর কুয়েন্টিন ট্যারেন্টিনো। চলচ্চিত্র তৈরির অদ্বিতীয় শৈলীর ঐশ্বর্যে তিনি সিনেমা ভক্তদের সহজেই আকৃষ্ট ও বিমোহিত করে আসছেন। ট্যারেন্টিনো মূলত সুপরিচিত তার আল্ট্রা ভায়োলেন্ট স্টোরী লাইনের জন্য। মূলত দুই ধরণের মানুষের ট্যারেন্টিনোর মুভি হজম হয় না। প্রথমত যাদের ড্রামা ফিল্ম ভালো লাগে না এবং দ্বিতীয়ত যারা ভায়োলেন্সপূর্ণ সিনেমা সহ্য করতে পারে না। তার সিনেমাগুলোতে চিত্তগ্রাহী ভায়োলেন্স বিশেষ জায়গা পেলেও সেটার উপরই পুরো সিনেমার নির্ভরতা থাকে না। Cannibal Holocaust, A Serbian Film, Human Centipede সহ অনেক ফিল্মেই মাত্রাতিরিক্ত ভায়োলেন্স রয়েছে, তবুও সেগুলো ট্যারেন্টিনোর ফিল্মগুলোর মতো এত প্রশংসিত হয় না, মাস্টারপিস তকমাও পায় না; কারণ গরসাম ক্লাইম্যাক্সের আগে তার ডায়লগ ড্রিভেন মুভিগুলো ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট, স্টোরি বিল্ডাপ, ইন্টেনসিটি ক্রিয়েট, পপুলার কালচারের যথার্থ ব্যবহার সহ নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, এরপরই আসে সেই উদ্দামতায় রাঙানো ফিনিশিং। ট্যারেন্টিনোর আরেকটা বিশেষত্ব তার চলচ্চিত্রে অনেক উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটালেও সেগুলো জগাখিচুড়ি পাকায় না। হঠাৎ সাদাকালো শটে শিফট করা, অ্যানিমে সিকুয়েন্সে যাওয়া, একটি দৃশ্য কয়েকটি অ্যাঙ্গেলে দেখানো, ফিল্মকে বিভিন্ন চ্যাপ্টারে ভাগ করা বা নন-লিনিয়ার সিস্টেমে অগ্রসর হওয়া— এ সবই তার ফিল্মকে ধাপে ধাপে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে থাকে এবং সবশেষে বেরিয়ে আসে অভিনব কিছু। তার ফিল্মে হিরো কিংবা ভিলেন— কে কখন আলুভর্তা হয়ে যাবে তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। আর বিলম্ব না ঘটিয়ে ট্যারেন্টিনোর ফ্যান্টাস্টিক ফিল্মোগ্রাফি পরিভ্রমণ শুরু করা যাক।
My Best Friend’s Birthday (1987)
ট্যারেন্টিনোর ডিরেক্টর হিসেবে যাত্রা শুরু ৩৬ মিনিটের এই সাদা-কালো শর্টফিল্ম দ্বারা। সেসময়ে তিনি ক্যাসেট ভাড়া দেবার দোকানে কাজ করতেন। ফিল্মটিতে তিনি ডিরেকশন দেয়া, স্টোরি লেখা, এডিট করা থেকে শুরু করে অভিনয়ের কাজটিও করেছেন। অরিজিনাল ভার্শন ৭০ মিনিটের হলেও ফিল্ম ল্যাবে আগুন লাগায় অনেকখানি অংশ পুড়ে যায়। প্রেমে ছ্যাক খাওয়া বন্ধুকে আরেক বন্ধুর স্মরণীয় জন্মদিনের উপহার দেয়া নিয়েই ফিল্মটির কাহিনী। এর উপরই ভিত্তি করে টনি স্কটের True Romance শীর্ষক মুভিটি নির্মাণ করা হয়েছিল, যেটির স্ক্রিনপ্লে ট্যারেন্টিনোই লিখেছিলেন।
Reservoir Dogs (1992)
ট্যারেন্টিনোর এই ফিচার ফিল্ম ডেবিউটিকে চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও হেইস্ট-ক্রাইম মুভি হিসেবে গণ্য করা হয়। মাত্র ১.৫ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত ট্যারেন্টিনোর সিনেমা ইতিহাসের অন্যতম বলশালী অভিষেক ফিল্মে ছ’জন গ্যাংস্টার ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও একটি অলংকারের দোকানে ডাকাতিতে অসফল হয়। এতে তারা একে অপরকে গুপ্তচর হিসেবে আশঙ্কা করে এবং চরম পরীক্ষায় পরস্পরকে অস্থির করে তুলে উত্তেজনামূলক কাহিনীর জাগরণ ঘটায়। এই কাল্ট ক্লাসিকটির গল্পে দক্ষতাপূর্ণ স্পর্শ, ফ্ল্যাশব্যাকের সুকৌশলী ব্যবহার, কাস্টের ফাটাফাটি অভিনয় এবং খেপাটে কুকুরের ন্যায় চরিত্রসমূহের নসিবে জুড়ে থাকা ট্রাজেডি ভায়োলেন্সে মুড়িয়ে দেখানোর মাধ্যমে ট্যারেন্টিনো ডেবিউতেই হাঁকিয়েছিলেন ছক্কা।
Pulp Fiction (1994)
নন-লিনিয়ার ফিল্মের জোয়ার শুরু করা ট্যারেন্টিনোর এই মাস্টারপিসটি দুই পাগলা হিটম্যান, এক গ্যাংস্টারের ড্রাগাসক্ত বৌ, একজন বক্সার ও এক জুটির অপকর্মে গাঁথা গল্প গোলাকার গড়নে দেখায়। ইতিহাসের প্রথম স্বাধীন চলচ্চিত্র হিসেবে দুইশো মিলিয়ন কামানো পাল্প ফিকশনের দুর্দম ডায়লগ ও দৃশ্যগুলো নিয়ে কথা আজও মুভি ভক্তদের মুখে মুখে থাকে। এর বিষ্ময়কর চিত্রনাট্যে সুনিয়ন্ত্রিত হাস্যরস ও কাহিনীর অনিশ্চিত অগ্রগমন নিশ্চিত করেছেন ট্যারেন্টিনো। সিনেমাটিতে অদ্ভুত ভাব ও হাইপাররিয়েলিটির সূত্রপাত্র ঘটিয়েছে ছফছটে সংলাপ ও কার্যকলাপসমূহ। ভাববিনিময়গুলো ন্যারেটিভের জন্য অনর্থক মনে হলেও সেগুলো চরিত্রায়নের সময় মনুষ্যপ্রকৃতিকে নিয়ে আসে সন্নিকটে। সমস্ত কিছু আতিশয্যপূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে পাল্প ফিকশনের সিনেম্যাটিক ল্যাঙ্গুয়েজ হয় আড়ম্বরপূর্ণ। কানস ফেস্টিভালে সর্বোচ্চ সম্মাননা ও সেরা স্ক্রিনপ্লের অস্কার পাওয়া পাল্প ফিকশন হলিউডের ১৯৯৪ সালের সেরা ফিল্ম, স্ট্যানলী কুবরিকের উক্ত বছরের সবচাইতে প্রিয় চলচ্চিত্র ও রজার ইবার্টের কাছে ৯০-এর দশকের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুভি। সিনেমা ও পপ কালচারের এই মাইলস্টোনে দুইশো পয়ষট্টিবার ‘F**K’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার বেশিরভাগই মহিমান্বিত করছেন স্যামুয়েল জ্যাকসন।
Four Rooms (1995)
চার ডিরেক্টর মিলে অ্যান্থলজি ফিল্মটির চারটি ভিন্ন ভিন্ন সেগমেন্ট পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে টরেন্টিনোর The Man From Hollywood শীর্ষক সেগমেন্টটি হয় সবার শেষে যেটিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন। নিউ ইয়ারের সেলিব্রেশনে মাতা হোটেলে টেডের অভিনয় প্লে করা টিম রথ তার জবের প্রথম দিনেই গেস্টদের থেকে পাওয়া উদ্ভট সব আবদার ও কারবারীতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। হোটেলের চার রুমের কাহিনী নিয়ে আবর্তমান ফিল্মটি প্রথম দিকে খারাপ লাগলেও পরে একটু হলেও ভালো লাগতে পারে।Jackie Brown (1997)
ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট জ্যাকি ব্রাউন নিজের কাজের পাশাপাশি চোরাই চালান করে থাকে। পুলিশের কাছে ধরা পড়ায় তদন্তকারী রে তার কাছে সহায়তা চায় ব্যবসায়ী ওডেলকে ধরার জন্য। যখন জ্যাকি অবগত হয় যে ওডেল তার কুপোকাত করতে চায়, তখন সে ফন্দি আঁটে সব পক্ষকে ধোঁকা দিয়ে লুট করার। সাসপেন্সের বাত্যা আনা ট্যারেন্টিনোর সবচেয়ে আন্ডাররেটেড এই মুভিটির সাউন্ডট্র্যাক অত্যুৎকৃষ্ট। যে সিনেমায় মাদাফাকা স্যামুয়েল আর দে নিরো একসাথে সেখানে আর বাড়তি কিছু না বললেও চলে।
Kill Bill (Vol. 1 & 2)
ট্যারেন্টিনো পাল্প ফিকশন বানানোর সময়েই এই ফিল্ম তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। এর শ্যুটিং শেষ হবার পর প্রায় চার ঘন্টার দীর্ঘ ফুটেজ হলে তিনি দুই খণ্ডে বিভক্ত করে Kill Bill Vol. 1 ও 2 নামে যথাক্রমে ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে মুক্তি দেন। এই উপাখ্যানের সূচনায় ভিউয়ারদের সামনে ‘দ্য ব্রাইড’ নামে পরিচয় দেওয়া এক রমণী কপালজোরে কোমা থেকে জাগ্রত হয়। নিজের করুণ পরিণতির জন্য সে বিলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার আগুনে জ্বলছে। তার নিদারূণ ক্রোধকে সঙ্গে নিয়ে সুদীর্ঘ এক সংগ্রামশীল যাত্রায় সে আরম্ভ করে রক্তের বন্যা বহানোর চরম উৎসব। কিল বিলের প্রথম পার্ট ধুম ধারাক্কা সব অ্যাকশন সিক্যুয়েন্সে চোখ ধাঁধাবে ও দ্বিতীয় ভাগ নিয়ে যাবে আবেগপ্রবণ এক ভ্রমণে।
Sin City (2005)
গ্রাফিক উপন্যাস অবলম্বনে কমিকবুকের লাইভ-অ্যাকশন ভার্শনরূপে দাঁড়া করানো হয়েছে সিন সিটির ভায়োলেন্সপূর্ণ দুনিয়া। এই ক্রাইম মিস্ট্রি অ্যান্থোলজিতে দর্শানো হয়েছে চারটি একই থিমের শর্টফিল্মকে। সুন্দর সাদা-কালো সিনেম্যাটোগ্রাফি ও ন্যারেশন সম্পন্ন এ অসাধুদের আখড়ার মেইন ডিরেক্টর ট্যারেন্টিনো না হলেও তিনি একটি শর্টফিল্মের গেস্ট ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন করেছেন। চারটির মধ্যে কোনটিতে তিনি অন্তর্ভুক্ত সেটা ক্রেডিট সিন না দেখেই আন্দাজ করতে পারবেন কেননা সেটিই দৃশম্যান হয় সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ হিসেবে। কাস্ট হিসেবে ব্রুস উইলসের নাম সিনেমাটি দেখার কারণকে আরও বর্ধিত করে। রবার্ট রগ্রিগেজ কিল বিল টু তে মাত্র এক ডলারের বিনিময়ে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরে কাজ করেছিলেন বলে ট্যারেন্টিনোও এই ফিল্মের সেগমেন্টটি ১ ডলারের বদৌলতেই পরিচালনা করেছিলেন।
Death Proof (2007)
ডেথ প্রুফ মূলত Grindhouse নামক ডবল ফিচার ফিল্ম হিসেবে রিলিজ হয়েছিল এক্সপ্লইটেশন চলচ্চিত্রগুলোকে ট্রিবিউট দেবার লক্ষ্যে। গ্রাইন্ডহাইজে দুটি ফুল ফিচার ফিল্মের একটি রদ্রিগেজের ডিরেক্ট করা Planet Terror ও অপরটি ট্যারেন্টিনোর এই Death Proof। সিনেমা দুটির মাঝে বিভিন্ন ফেইক ফিল্মের ট্রেইলারও দেখানো হয় যেগুলোর বেশিরভাগই অবশ্য পরবর্তীতে সত্যিকারের ফিল্মে রূপান্তর করা হয়। ডেথ প্রুফে রিয়াল লাইফে স্টান্ট ডাবল হিসেবে কাজ করা জোই বেল নিজের আসল নামেরই ক্যারেক্টারে অভিনয় করেছেন ও ভালো স্ট্যান্টও দেখিয়েছেন। ডেথ প্রুফে কোন জিনিসটা মরণ রোধক ও তা মৃত্যুকে ঠেকাতে পারে কি না সেটা যারা দেখেননি তাদের জন্য সাসপেন্স হিসেবেই রাখলাম।
Inglorious Bastards (2009)
কিল বিল বানানোর আগে থেকেই এই সিনেমাটির স্ক্রিপ্ট নিয়ে ট্যারেন্টিনো কাজ শুরু করছিলেন কিন্তু মন মতো এন্ডিং পেতে ব্যর্থ হওয়ায় নির্মাণকাজ রেখেছিলেন স্থগিত। ফিল্মটির প্রধান ভিলেন কর্নেল হ্যানস্ লান্ডার চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য যুতসই কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বিধায় বানানোর চিন্তা মাথা থেকে প্রায় ঝেরেই ফেলেছিলেন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ক্রিস্টফ ওয়াল্টজের অডিশনের পর তা আর করতে হয়নি। পরে এই ওয়াল্টজই ট্যারেন্টিনোর ফিল্মের প্রথম অভিনেতা হিসেবে অস্কার জেতেন এবং জ্যাঙ্গো আনচেইনড ফিল্মেও সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটান আবারো অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতে। ছায়াছবিটিতে কোনোমতে ত্রিশ শতাংশ ভাষা ইংরেজি; সিংহভাগ জুড়েই রয়েছে ফ্রেঞ্চ ও জার্মান এবং খানিকটা ইতালিয়ান ভাষার ব্যবহার যা হলিউড ফিল্মের ক্ষেত্রে কখনো দেখা যায়না। সিনেমাটির পটভূমি গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ঘিরে। নাৎসি বাহিনী দ্বারা অধিকৃত ফ্রান্সে ‘দ্য বাস্টার্ডস’ নামে একদল ইহুদী সৈন্য খ্যাতিলাভ করে চুলসমেত নাৎসিদের মাথার খুলির ছাল চেঁছে ও নানা নৃশংস পন্থায় হত্যার মাধ্যমে। বিশেষ কারণে অ্যাল্ডো রেইনের (ব্র্যাড পিট) অধীনে থাকা বাস্টার্ডসদের টার্গেটে আসে ফরাসী ইহুদী যুবতীর তত্ত্বাবধানে থাকা একটি মুভি থিয়েটার। নারকীয়তায় হিউমারের মেঘে ঢাকা ট্যারেন্টিনোর ইউনিভার্সের আপডেটেড ইতিহাসে হিটলার ও তার নাৎসি বাহিনীর শেষ পরিণতিটা দেখলে বাকরুদ্ধ হবেন সেটা বলাই বাহুল্য।
Django Unchained (2012)
চলচ্চিত্রটির কাহিনী অগ্রসরমান হয় বাউন্টি হান্টার শাল্টজ এর সহযোগীতায় বিমুক্ত হওয়া ক্রীতদাস জ্যাঙ্গোর তার স্ত্রীকে এক বর্বর আবাদী জমির মালিকের বন্দি থেকে বাঁচানোর মিশন নিয়ে। হিরোর রোল করতে অভ্যস্ত ডিক্যাপ্রিওকে ফিল্মটিতে খলনায়কের চরিত্রে প্রথমে পরিপাকে একটু সমস্যা হলেও পরে ঠিকই তাকে ব্যাডঅ্যাস ভিলেন লাগবে। ট্যারেন্টিনো যতগুলো ক্যারেক্টার সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে শুধু লিওর ওই ক্যারেক্টারটাকেই তিনি আসল জীবনে ঘৃণা করেন। ক্যাপ্রিওর পালনীয় চরিত্রটির প্রচুর গালিগালাজে ভর্তি ডায়লগ থাকায় তার খুব ইতস্তত বোধ হচ্ছিলো। তবে ত্রাণকর্তা জ্যাকসন ছিল তাকে গালি দিয়ে দিয়ে জড়তা কাটানোর জন্য। খাবার টেবিলের সিনে দুর্ঘটনাবশত সত্যিই ডিক্যাপ্রিওর হাত কেটে রক্ত পড়তে থাকে, তবুও সে তার অভিনয় চালিয়ে যায়। এতে ফিল্ম ক্রুর সবাই তার জন্য দাঁড়িয়ে হাত তালি দেয় আর ট্যারেন্টিনোও মুগ্ধ হয়ে ওই দৃশ্যটাই রেখে দেন। জ্যাঙ্গোর রোল করা জেমি ফক্স একজন গায়কও যিনি কানইয়ে ওয়েস্টের সঙ্গে Golddigger নামক একটি জনপ্রিয় হিপহপ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। জ্যাঙ্গো আনচেইনড একশো ত্রিশ দিনে শ্যুট করা হয়। আর কোনো ফিল্ম শুট করতে তিনি এত সময় নেননি। একশো মিলিয়নে নির্মিত ফিল্মটি ট্যারেন্টিনোর সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং বক্স অফিসে ৪২৫.৪ মিলিয়ন কামাইয়ের মাধ্যমে তার সর্বোচ্চ আয়কৃত মুভিও বটে। সিনেমাটিতে রেকর্ড ১১৬ বার N Word টি ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক আশা নিয়ে ফিল্মটি দেখতে বসে আপনার হাঁটুর হাড় ভেঙে গেলেও আশাহত হবার সুযোগ নেই।
The Hateful Eight (2015)
প্রথমে ফিল্মটি জ্যাঙ্গো আনচেইনডের সিক্যুয়েল হিসেবে বের করার পরিকল্পনা ছিলো। স্ক্রিপ্ট অনলাইনে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ছবিটি ট্যারেন্টিনো প্রথমে বানাতেও চাননি। পরবর্তীতে স্যামুয়েলের কথায় শেষমেশ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। এতে সিনেমাটি হয়ে যায় লেজেন্ডারি জুটি ট্যারেন্টিনো ও জ্যাকসনের মধ্যকার ষষ্ঠ কোলাবোরেশন। ক্লাসিক The Thing ফিল্ম দেখার পর স্বীয় অনুভূতি রূপকের মাধ্যমে ট্যারেন্টিনো এই ফিল্মে উপস্থাপনা ঘটিয়েছেন। দ্য থিং এবং হেইটফুল এইট— উভয় ফিল্মেই অভিনয় করেছেন কার্ট রাসল। এই ওয়েস্টার্ন ধাঁচের মিস্ট্রি ফিল্মে প্রবল তুষারঝড়ে দুই বাউন্টি হান্টার বের হয় আশ্রয়ের সন্ধানে কিন্তু পড়ে যায় বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণায় পরিপূর্ণ এক ষড়যন্ত্রের ফাঁদে। সিনেমাটির কাহিনী বিল্ডাপে বেশ সময় নিলেও দ্বিতীয়ার্ধের থ্রিল ও সাসপেন্স উপচে পড়ে সব শোধ করে দেয়। না বললেই নয়, ফিল্মটিতে চতুর্থবারের মতো এবং টানা তিন ফিল্ম ধরে ট্যারেন্টিনোর সিনেমার কোনো ক্যারেক্টারের বিচিতে গুলি লাগে
Once Upon a Time in Hollywood (2019)
উনিশ’শ ঊনসত্তর এ টিভি তারকা রিক ডাল্টন ও তার স্ট্যান্টম্যান হিসেবে কর্মরত বন্ধু ক্লিফ বুথ পরিবর্তনের পবনে বেগবান হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত। রিকের বাসার নিকটেই সেলিব্রেটির লাইফ উপভোগ করা শ্যারন টেটের আবাস। সবার অজান্তেই তাদের ভাগ্যলিপি এমন এক তিমিরাচ্ছন্ন রাত অতিক্রম করার জন্য অপেক্ষমান, যেটা স্মৃতির উঠোনে সহজে বিস্মৃত হবার মতো নয়। এই চলচ্চিত্রটির যোগসূত্র রয়েছে ষাটের দশকের বিখ্যাত অভিনেত্রী ও হলিউডের সুপরিচিত ডিরেক্টর রোমান পোলানস্কির স্ত্রী শ্যারন টেটের সঙ্গে। ধর্মোন্মত্ত কাল্ট লিডার চার্লস ম্যানসনের নির্দেশে চালানো অকরুণ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম শিকার হয়েছিলেন সগর্ভা শ্যারন। সেই হিসাবে ফিল্মটির উপসংহার সহজেই আন্দাজ করার কথা। কিন্তু এটা যে ট্যারেন্টিনোর ফিল্ম আর তার মুভির কাহিনী কোনদিকে রওনা দেবে সেটার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না কেউই। বরাবরের মতো এই ফিল্মেও ট্যারেন্টিনো রেখেছেন চওড়া চমক। ডিক্যাপ্রিও, পাচিনো, মার্গট ও কিংবদন্তি পাচিনোদের নিয়ে গড়ে উঠা রাজোচিত এই ফিল্ম কেন্দ্রীয় ক্যারেক্টারগুলোর গভীরতায় নিয়ে দর্শনোতে মহিমা অর্জন করে। এর স্ক্রিপ্টে ট্যারেন্টিনো ড্রামেটিক কমেডি সেঁধিয়েছেন সূক্ষ্মতা সহকারে এবং সেকেলে হলিউডকেও ফুটিয়ে তুলেছেন অবিকলভাবে। জবর এই সিনেমাটি এককথায় একজন সিনেমা নির্মাতার সিনেমার প্রতি অপার ভালোবাসার ঘোষণা-পত্র।Bonus Film!!!!
From Dusk till Dawn (1996)
এই সিনেমাটি পরিচালনার দায়িত্বে না থাকলেও ফিল্মটির স্ক্রিনপ্লে লেখার সঙ্গে বড়ো একটা রোলেও অভিনয় করেছেন ট্যারেন্টিনো। এতে রয়েছে পা পাগল ট্যারেন্টিনোর সালমা হায়েকের পা চুষে মদ্যপানের আইকনিক দৃশ্যটি। এর প্লটে দুই বর্বর লুটেরা ভাই ম্যাক্সিকোতে পলায়নের লক্ষ্যে এক যাজকের পরিবারকে জিম্মি করে। এক নির্ধারিত মদখানায় পৌঁছাবার পর তারা যেসব জিনিসের সাক্ষী হয় সেগুলোর চিন্তা তাদের উন্মত্ত মস্তিষ্কতেও কখনো আসেনি। ফিল্মটিতে ট্যারেন্টিনো যৌন নির্যাতনকারী ও পাগলাটে গুন্ডার চরিত্রটি ভালোভাবেই নিভিয়েছেন। থ্রিল দিয়ে এগিয়ে যাওয়া কাল্ট ক্লাসিক এই মুভিটির ক্লাইম্যাক্সে পুরো জনরাই পাল্টে দেয়া টুইস্ট দেখে নির্ঘাত হতভম্ব হয়ে যাবেন। এছাড়াও ট্যারেন্টিনো Narutal Born Killer এর স্টোরি লিখেছেন, যদিও ফিল্মটি তার কাছে জঘন্য লেগেছে। বেশ কিছু সিনেমায় রয়েছে তার ক্যামিও-ও। ট্যারেন্টিনো এমন এক ডিরেক্টর যিনি অন্যান্যদের তৈরী প্রিয় সিনেমাগুলোকে অসঙ্কোচে ট্রিবিউট দিয়েছেন, কিন্তু বারংবার ঠিকই মৌলিক চিত্রনাট্য নিয়ে গড়ে তুলতে পেরেছেন অতুলন সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স। অসাধারণ সব চলচ্চিত্র তৈরির কারিগর ট্যারেন্টিনো এখনো সেরা ডিরেক্টরের অস্কার পাননি বলে স্যামুয়েলের ভাষায় বলা যায় “Tarantino Doesn’t Need Any Mathafukin’ Oscar To Prove How Fuckin’ Great He Is!”তার পরবর্তী প্রোজেক্ট ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন হলিউডে দর্শানো Bounty Law শীর্ষক কাল্পনিক টিভি ধারাবাহিককে বাস্তবে রূপান্তর ঘটানো। ট্যারেন্টিনো অনেকবারই উল্লেখ করেছেন যে দশটি ফিল্মের পরই অবসর নেবেন, সেই হিসাবে আর একটি ফিল্ম নির্মাণ করেই থেমে যাবেন। যদিও বলেছেন পনের বছরের বিরতি নিয়ে আবারও ফিরে আসতে পারেন। খুব করে চাই অবসরের চিন্তাটা তিনি যেন মাথা থেকে একদমই ঝেরে ফেলেন। সামনে ট্যারেন্টিনো আবারো পাহাড়সম প্রত্যাশা দিয়ে আকাশচুম্বী ফলাফল উপহার দেবেন সেই কামনা।
Writer: Yeasin Mehedi