🎬 Movie ⭕ The Godfather : Part 2,3
গড ফাদার ট্রিলজিকে বলা যায় ক্রাইম ড্রামার অগ্রপথিক এবং সফল কাণ্ডারী। Goodfellas এর মত সারা জাগানো সিনেমা আর Shopranos এর মত জনপ্রিয় টিভি সিরিজের সম্পূর্ণ প্রভাব রয়েছে এই গডফাদারের৷ পরবর্তী আরো বহু আন্ডারওয়ার্ল্ড ভিত্তিক সিনেমার সঞ্চালকও বলা যায় একে৷ পুজো’র সুনিপুণ হাতে আর কপোলার নিখুঁত দক্ষতায় এতে কাহিনী বয়ানের যে শৈলী প্রকাশ পেয়েছে মনে হয় না এর তুল্য অন্য কোথাও আছে! বিশেষ করে পার্ট টু তে কর্লিয়ন পরিবারের উত্থান এবং তার বিস্তৃত সাম্রাজ্যের বর্ণনা একই সাথে দৃশ্যমান হওয়া, এতে কপোলার বিশেষ দক্ষতায় দর্শকমনে জাগে ব্যাতিক্রমী স্বাদ।
সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের একটি গ্রাম কর্লিয়ন। ভাগ্যদোষে সেখানের মাফিয়া হোতার সাথে ঝামেলা বাধায় বাবা মা হারা হয় কিশোর ভিতো। এলাকাবাসীর সাহায্যে সে ভেসে পড়ে সমুদ্রে৷ উঠে আসে আমেরিকায়৷ তখন ভাগ্য বদলাতে আমেরিকায় আসছিল বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো মানুষ। তাদের মাঝে ভিতোও একজন৷ নিউইয়র্কে বেড়ে উঠে ভিতো। বহু নাটকীয়তার মাঝ দিয়ে গিয়ে এক সময় জলপাই তেলের ব্যবসা শুরু করে৷ পরবর্তীতে সে নিজের নামের শেষের পদবী হিসেবে গ্রামের নাম বেছে নেয়৷ এভাবেই উত্থান ঘটে ভিতো কর্লিয়ন এবং অচিরেই জলপাই তেলের ব্যবসার আড়ালে গ্যাম্বলিং, জুয়ার রাজ্য গড়ে উঠে৷
পার্ট টু’তে এক অববাহিকায় যেমন দেখা যায় কর্লিয়ন গ্যাং এর উত্থান, আরেক অববাহিকায় চলে তার সাম্রাজ্যের দাপট৷ ডন মাইকেল কর্লিয়নির নতুন বিজনেসের সফলতা এবং তৎপরবর্তী একটি বিগ ডিলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা কিছু বিশ্বাসঘাতকতা, অনাস্থার বাস্তবিক রুপায়ন ঘটেছে এতে৷
কিন্তু মাইকেলের যত সফলতাই থাকুক, তার জীবনের অতীতের কিছু ঘটনা ভুলবার নয়৷ ক্রমাগত তার স্ত্রীর নৈরাশ্যতা, ভয় দুজনকে করে বিচ্ছেদ৷ যে প্রিয়জন এবং পরিবারের জন্য নিজেকে সপে দিয়েছেন সেটাই তার আতঙ্কজনক পরিস্থিতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷
তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার বিজনেস কালো থেকে সাদা করবেন৷
এই মনোভাব তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়৷ কিন্তু চাইলেই কি আর সব ইচ্ছা পূরণ হয়! পৃথিবীর অনেক চাহিদাই হয়তো টাকা দিয়ে পূরণ করা যায়৷ কিন্তু একটা ইচ্ছা কখনোই পুরণ করা যায় না।
ওই সমস্ত দূর ভাগ্য, আত্ত্বগ্লানি, ক্লেদ হলো এই জীবন বেছে নেওয়ার ফলাফল এবং পরিণাম। এ ফলাফল ও পরিণাম কর্লিয়নির প্রতিটি সদস্য যেমন বয়ে বেড়িয়েছে, তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি ক্রাইম সংঘটনের হোতাদেরও বয়ে বেড়াতে হবে৷
all the power on earth can’t change destiny
গল্পের গভীরতার খাতিরে গড ফাদার পার্ট থ্রি বেশ এগিয়ে থাকবে৷ পরিনতি, ভাগ্য কিভাবে তার আপন গতিতে চলে, এবং তা পাল্টানোর ক্ষমতা নেই কারো এ বার্তাটিই বুঝিয়ে দিয়েছে এ গল্প৷ এ বার্তাটি প্রেজেন্টেশনে সিনেমাটি যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তা টপকাবার সাধ্য নেই কারো, যতই স্লো গতির আর টম হ্যাগেনের অবিদ্যমানতায় মুভিটিকে খারাপ বলা হোক না কেন!
প্রথমটির ন্যায় পরের দুটিতেও দারুণ কাস্ট বাছায় করেছেন কপোলা৷ বিশেষ করে ভিতো কর্লিয়নির চরিত্রে রবার্ট দে নিরোকে বাছাই করা। অনর্গল ইতালিয়ান ডায়লগগুলোকে উৎকৃষ্টতর করতে দে নিরো প্রায় চার মাস যাবত ইতালিয়ান ভাষা রপ্ত করতে ব্যয় করেছেন। এবং নিজেকে ভিতো কর্লিয়নির চরিত্রে মিশে ফেলতে সিসিলিতে গিয়ে থেকেছেন কয়েকমাস। বৃদ্ধ বয়সের চোয়াল ব্যাকা ভাঙা ভাঙা গলায় কথা বলা ভিতোকে সঠিক মাপকাঠিতে এনেছেন যুবক বয়সের ভিতো চরিত্রে অভিনয় করা দে নিরো৷ তার নিজেকে এভাবে মিশিয়ে ফেলাটা দারুণ লেগেছে, ব্রান্ডো আর দে নিরোর মাঝে তফাত আছে বলেই মনে হয় না৷ তার জীবনের নিঃসন্দেহে সেরা পারফরম্যান্সগুলোর একটি এটি৷ অন্যদিকে আল পাচিনো শুণ্য থেকে উঠে আসা এক অভিনেতা প্রথম পার্টে তো অসাধারনত্ব ছিলই, পরের দুটোতে রিয়েলিস্টিক পারফরম্যান্সে শতভাগ সফল৷ আল পাচিনোই ওই ছয় জনের একজন যারা একই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দুবার অস্কার নমিনেশন পেয়েছেন৷
সম্মানযোগ্য উল্লেখ করতে হয় সিনেমাটোগ্রাফার গর্ডন উইলিসের কথা৷ প্রথম পার্টে তার কাজ প্রথমবার দেখেছি বলে অতটা অনুভব করতে পারিনি৷ কিন্তু পরের দুটোতে তার অভিনব সিনেমাটোগ্রাফি ঠিকই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷ দুজন মানুষ কথা বলছে, তাদের মাঝে একটি ফুলের গাছ, একজন আবার কথায় কান্নাকাটিও করছে, এই দুজনের দু ধরণের অভিব্যক্তি যতটুকু তাদের কথায় উঠে আসছে ঠিক ততটুকুই অনুভূত হচ্ছে আলোকসজ্জার ভাব থেকে। প্রতিটি সিন পরিবেশ অনুযায়ী সাজানোর কারিশমা আছে এখানে৷ পর্দার ঠিক ততটুকুই আলোকিত যতটুকু প্রয়োজন হচ্ছে। এ বিষয়গুলো যথেষ্ট মনোরঞ্জন করেছে।
বাহুল্যবর্জিত মিউজিকের ব্যবহার, সাধারণ দৃশ্য আর জটিল দৃশ্যের ভিন্ন ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক মনকে করেছে আমোদিত, চিত্তকে করেছে প্রশান্ত এবং চোখকে করেছে বিমুগ্ধ বিস্মিত।
Basic Information
Director : Francis Ford Coppola
Genre : Crime
Duration : 3h+
Cast : Robert de Niro, Al Pacino, Sophia Coppola, Andy Garcia, Diane Keaton, Robert Duvall, Talia shire, John Cazale
©Rashan Faredi