আপনি কি কোনদিন দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল/ভোলাতে গেছেন? যদি গিয়ে থাকেন তাহলে সম্ভবত অনেক জায়গায় লঞ্চ টার্মিনালে সম্ভবত এমন লেখা দেখছেন
এই লঞ্চ টার্মিনালটা জাপান সরকারের সহায়তায় বা জাইকার অর্থায়নে নির্মিত। মোটকথা ছোট লঞ্চ টার্মিনালটা থেকে দেশের বড় কোন মেগা প্রকল্পে জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনালগ্ন হতে বন্ধুর মতো পাশে আছে জাপান আর এই বন্ধুর মতো পাশে থাকার অন্যতম কারণ হলো রাধাবিনোদ পাল। এই রিভিউ যতটা টোকিও ট্রায়ালের তারচেয়ে অনেকটা বেশি রাধাবিনোদ পালের।
Tokyo trial (2016) Series Bangla Review
Synopsis
আজকে আমরা যে জাপানকে সভ্য হিসাবে চিনি আসলে জাপান ১৯৩০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ঠিক এমন ছিল না। অনেকটা অসভ্য, বর্বর, ছিল বলা চলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান পুরো এশিয়াতে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করার জন্য একে একে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, চীন, মালেশিয়া ভিয়েতনাম, বার্মাতে তাদের সামরিক বর্বরতা চালায়। ১৯৩৭ সালে জাপান চীনের নানকিং শহরে আক্রমণ করে। নানকিং এর বর্বরতা এতটাই ভয়ানক ছিল যে চীন এটাকে ইতিহাসে নানকিং ধর্ষণ নামে অভিহিত করা হয়। নানকিং এর ঘটনায় অল্প দিনে প্রায় তিন লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে এসে জাপান আমেরিকার পাল হার্বারে হামলা চালায়। আর এই ঘটনা প্রতিশোধ স্বরূপ আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জড়িয়ে যায়। আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলে যাতে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। ফলস্বরুপ হিরোশিমা এবং নাগাসাকির অনেক মানুষ পঙ্গুত্ব বহন করে। পরবর্তীতে জাপান মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মিত্রবাহিনীর দেশগুলো জাপানকে বিচারের মুখোমুখি করে তাদের ফেলে আসা অমানবিক, নজিরবিহীন অপরাধের জন্য । যার মধ্যে অন্যতম ছিল নানকিং ধর্ষণ/ নানকিং ট্যাজেডি। বিচারের মুখোমুখি করা হয় জাপান সরকারের উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকতা, সম্রাট, এবং সামারিক বাহিনী সহ মোট ২৮ জন কর্মকর্তাকে। এই বিচারকার্য সম্পাদন করার জন্য ১১ টা দেশ থেকে ১১ জন বিচারকে নিয়োগ করা হয়। যারমধ্যে নিয়োগ করা হয় ভারত থেকে কলকাতা হাইকোর্টের বাঙালি বিচারক রাধাবিনোদ পালকে। রাধাবিনোদ পালের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার মিরপুরে। বিচারকার্য সম্পাদন করার সময় ১১ জন বিচারকের মধ্যে ১০ জনই একমত পোষণ করে যে নানকিং ঘটনার জাপানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সহ পুরো জাপানের জনসাধারণকে দায়ী করা হয়। তারা এই বিচারকে মানবতাবিরোধী যুদ্ধের প্ররোচনা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সবারই শাস্তি দাবি করে। কিন্তু বাঙালি বিচারক পাল এর বিরোধিতা করে এটাকে প্রচলিত সাধারণ কোন আইনে বিচার করতে বলে। তার মনোভাবের সাথে পরবর্তীতে নেদারল্যান্ড এবং ফ্রান্সের বিচারক অনেকটা একমত পোষণ করে। রাধাবিনোদ পাল তার যুক্তি তর্কে এটা উপস্থাপন করে যে নামকিং ধর্ষন করে জাপান যুদ্ধপরাধ করছে এটা ঠিক কিন্তু যারা জাপানের হিরোশিমা , নাগাসাকিতে বোমা ফেললো তাদের বিচার কে করবে? রাধা বিনোদের এই যুক্তি তর্ক জাপানের অনেক কর্মকতার বিচার শাস্তি কমা, সম্রাটের বিচারের মুখোমুখি না হওয়া সেই সাথে বড় আর্থিক জরিমানা থেকে জাপানকে উদ্ধার করে।
অন্যান্য প্রসঙ্গঃ রাধা বিনোদ পালের চরিত্র অভিনয় করছে ইরফান খান। ইরফান যতটুকু স্ক্রীনে ছিল জাস্ট মাত করে রেখেছেন। তবে রাধাবিনোদ পালের চরিত্রটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কিন্তু নেটফ্লিক্স রাধাবিনোদ পালের চরিত্রটা আরও গভীরভাবে প্রাসঙ্গিকভাবে প্রেজেন্ট করতে পারতো কিন্তু এখানে অনেক তথ্য মিসিং ছিল। যা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয় নাই তাই রিভিউতে অনেক না দেখানো তথ্যও আমি উল্লেখ করছি।
জাপান সরকার রাধাবিনোদ পালের অবদান এখনো স্বীকার করে। জাপানের এক মন্দিরে রাধাবিনোদ পালের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। জাপানের সম্রাট রাধাবিনোদ পালকে সম্ভবত ১৯৬৬ সালের দিকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করেন। জাপান সম্রাট ঘোষণা দেয় যতদিন জাপান থাকবে ততোদিন বাঙালি না খেয়ে মরবে না। জাপানে স্কুলে রাধাবিনোদ পালের নামে একটা আলাদা চ্যাপ্টার আছে এবং জাপান সরকার একটা বই বের রাধাবিনোদ পালের নামে।
বি দ্রঃ এখানে অনেক বিষয়ে জাপান বিচারের মুখোমুখি হয় তবে উল্লেখযোগ্য ছিল নানকিং ঘটনা। তাই রিভিউতে নামকিং ঘটনার উপর আলোকপাত করা হয়েছে। তো যারা এখনো দেখেননি, দেখে ফেলুন চার পর্বের এই অসাধারণ সিরিজ।
Series: Tokyo trial (2016)
Director: Pieter VerhoeffRob W. King
Writer: Rob W. King,Max Mannix, Kees van Beijnum
Genre: Historical drama
Language: English, Japanese
Country: Japan, USA
MDL: 7.4
লিখেছেনঃ Flamy Tuhin