এই শ্রেণিবৈষম্য, হাসি-কান্না, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ সহ অসংখ্য বিষয় খুব সহজেই আপনাকে শেখাবে এই “সহজ পাঠের গপ্পো”

Sahaj Paather Gappo (2016)-cinemabaaz.xyz

Share This Post

আমাদের নেমন্তন্ন করবে তো ঠাকুর? তাইলে তখন কেনো কইলো না!

মাটির দেয়ালে মাঝের জানালা দিয়ে আকাশপানে তাকিয়ে ছোটুর জিজ্ঞাসা।

ঠাকুরের প্রতি ছোটুর জিজ্ঞাসা৷ Image source: Movie

শৈশবের গল্প। গ্রামবাংলার গল্প। ভালবাসার গল্প।পার্বণের গল্প। প্রতীক্ষার গল্প। বেঁচে থাকার গল্প।জীবনের গল্প। এ সব নিয়েই ‘সহজ পাঠের গপ্পো’।

বিভূতিভূষণের তালনবমী পড়ে থাকলে এই সিনেমার প্লট খানিকটা আন্দাজ করা যেতে পারে। তবে পুরোটা নয়৷ কেননা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তালনবমী’ গল্প নিয়ে প্রথম সিনেমা তৈরি করেছেন মানস মুকুল পাল।

কাহিনি সংক্ষেপঃ বছর দশেকের কিশোর গোপাল৷ সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা শয্যাশায়ী হবার পর উদাসীন শৈশবে দায়িত্ববোধের অবয়ব ফুঁটে উঠে। তার মায়ের পক্ষে তাকে এবং তার ছোট ভাই ছোটুকে দু’বেলা খাবার দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গোপাল অর্থ উপার্জনের উপায় তৈরি শুরু করে। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির দেয়াল কিংবা কুয়ো পরিষ্কার করে দু-পাঁচ টাকা রোজগারের চেষ্টা করে৷ এছাড়া ঝিলের পাড়ের কলমি শাক কিংবা তালতলায় কুড়িয়ে পাওয়া তাল বাজারে বিক্রি করে। বহু কষ্টে কোনভাবে এগিয়ে চলে ২ বেলা আহার জুগিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই। এদিকে তালনবমীর পুজো উপলক্ষে গ্রামের অবস্থাপন্ন একটি বাড়িতে অনেকে নিমন্ত্রণ পায়। ছোট ছেলেটির আশা সেও যাবে ঐ বাড়িতে, ভালোমন্দ খাবে। সেও নেমন্তন্ন পাওয়ার আশায় বিনে পয়সায় চারখানা তাল দিয়ে আসে সে বাড়িতে। তবুও যদি যদি দাওয়াত পাওয়া যায়৷ তাহলে অন্তত পেট পুরে “পোলুয়া, আলুর দম, চাটনি, লুচি” আরো কত কি খাওয়া যাবে!

ছোটু সেই নেমন্তন্নের অপেক্ষায়…

ছোটুর জিজ্ঞাসা, Image source: Movie

বিশ্লেষণঃ এ গপ্পোর প্রাণভোমরা দুই ভাই৷ গোপাল আর ছোটু৷ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে চারিপাশ। সূর্যের দেখা নেই৷ এরই মাঝে হাড় লিকলিকে গায়ে ময়লা মাখা দুটো ক্ষুধার্ত বাচ্চা, বিষণ্ণ মুখে ঝিলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। ছোটু কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো, “বাবা কি আর বাঁচিবি নে দাদা?” বাচ্চা ছেলেটির অভিব্যক্তি দেখে আন্দাজ করা অসম্ভব এটিই তার জীবনের প্রথম কাজ। দু’ভাই খিদের কষ্ট, বাড়ির অভাব অনটন, দুর্দশা এসব নিয়ে একে অপরের সাথে কথা বলতে বলতেই ওদিকে আবার বড়শিতে একটা বড় মাছ এসে পড়ল। গোপাল সে মাছ তুলতে পারার আগেই, বড়শিখানা ছিঁড়ে গেল। একটু আগে যে ছোটু শয্যাশায়ী বাবার কথা ভেবে দুঃখ করছিল, সে হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠল।

এমনই সব হৃদয়গ্রাহী সংলাপ আর চিত্রায়ণ দিয়ে ভরপুর “সহজ পাঠের গপ্পো”

চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চার পাতার ছোটগল্প– ‘তালনবমী’। এই গল্প অবলম্বনে সার্থক চিত্রনাট্য লিখেছেন চলচ্চিত্রকার মানস মুকুল পাল। এটি তাঁর পরিচালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি। এই ছবির মূল শক্তি অনবদ্যভাবে লেখা একটি realistic চিত্রনাট্য ও সংলাপ। অত্যন্ত সহজ, কায়দাবিহীন কিছু দৃশ্য। সংলাপ ও দৃশ্যের ফাঁকে অজান্তে এসে পড়ে অন্য কোনও প্রশ্নের ইঙ্গিত এবং দর্শক সেই ভাবনার পরিসরটুকু পান সহজভাবেই।

অভিনয়ঃ ছবির অন্য একটি সম্পদ অবশ্যই অভিনয়। মূল চরিত্রে ছিল দুজন মেধাবী শিশু অভিনেতা। যদিও শিশু অভিনেতাদের দিয়ে স্বতস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক অভিনয় করানোটাই অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। মানস মুকুল সেই কাজটিই করেছেন অত্যন্ত নিপুণভাবে। যতটুকু জেনেছি, যে দেগঙ্গা ও বসিরহাট অঞ্চলের গ্রামের স্কুল থেকে মানস মুকুল আবিষ্কার করেন সামিউল আলম (গোপাল-এর চরিত্রে) ও নূর ইসলামকে (ছোটুর চরিত্রে)। প্রায় ৭-৮ মাস ধরে অভিনয়ের ঘষামাজা চলে। তারপর শ্যুটিং। এই অধ্যাবসায়টা কিন্তু ফুটে উঠেছে প্রায় প্রত্যেকটি দৃশ্যে।  মায়ের চরিত্রে নবাগতা স্নেহা বিশ্বাস যে অভিনয়টা করেছেন তা প্রায় আন্তর্জাতিক মানের। গোপাল আর ছোটুর মায়ের চরিত্রটা দেখতে গিয়ে দর্শক বারবারই ভুলে যাবে এটা একটা সিনেমা; এতই স্বতঃস্ফূর্ত তার অভিনয়। শ্রেষ্ঠ শিশু-অভিনেতার জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছে সামিউল আর নূর যুগ্মভাবে।

ভাতৃত্বের ভালোবাসা। Image source: Google

সংগীতঃ সিনেমার আবহ সংগীত ছিল এককথায় অনবদ্য। প্রতিটি দৃশ্যকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে নিত্যদিনের সাথে পরিচিত সব শব্দগুলো। হোক সেটা পাখির ডাক, মেঘের গর্জন কিংবা জলের উপর বৃষ্টির ফোটার টাপুর টুপুর মিষ্টি আওয়াজ।

চিত্রায়ণঃ চিত্রগ্রাহকের প্রশংসা ছাড়া এ সিনেমা নিয়ে কথা বলাই মূল্যহীন। প্রাণবন্ত ক্যামেরার কাজ আপনাকে পরিবেশের সাথে মিশে যেতে বাধ্য করবে। ক্যামেরার দুর্দান্ত কাজ আর দৃশ্যায়ন প্রথম দৃশ্যেই দর্শকের নজর কেড়ে নেবে। 

একজন সত্যিকারের সিনেমাপ্রেমী হিসেবে নিশ্চিতভাবেই সিনেমাটি আপনার দেখা উচিৎ। হয়তো তথাকথিত চাকচিক্য, সুন্দর মুখ কিংবা নামকরা কোন সেলিব্রেটি নেই, কিন্তু যা আছে তা আপনার মনকে ভরিয়ে তুলতে যথেষ্ট।

রাষ্ট্র ও সমাজের প্রচলিত পুঁজিবাদী শ্রেণীবৈষম্য। একদিকে চলছে দেদারছে সম্পদ কুক্ষিগত করা ও এর অপচয়ের মহোৎসব৷ অন্যদিকে সামান্য দুবেলা আহার জোটানোর জো নেই!

এই শ্রেণিবৈষম্য, হাসি-কান্না, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ সহ অসংখ্য বিষয় খুব সহজেই আপনাকে শেখাবে এই “সহজ পাঠের গপ্পো”

মুভি সংক্রান্ত তথ্যঃ

নামঃ সহজ পাঠের গপ্পো / Color of Innocence

পরিচালকঃ মানস মুকুল পাল

অভিনয়েঃ সামিউল আলম, নূর ইসলাম, স্নেহা বিশ্বাস

ট্রেইলার লিংকঃ

ডাউনলোড করতে ভিজিট করুনঃ

More To Explore

Kumbalangi Nights (2019)-cinemabaaz.xyz

Kumbalangi Nights (2019) Movie Review

🎬 Movie – Kumbalangi Nights (2019)🔰 Drama – Drama/Romance🔰 Runtime – 2hours 15 Minutes🔰 Cast – Fahadh Fassil, Shane Nigam, Soubin Shahir, Sreenath Bhasi, Mathew Thomas🔰 Director – Madhu C.

Read More »
Khoj (2017)-cinemabaaz.xyz

খোঁজ (২০১৭) মুভি রিভিউ

সিনেমাঃ খোঁজ (২০১৭)🔰 ধরণঃ থ্রিলার, ক্রাইম, মিস্ট্রি🔰 চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ অর্ক গাঙ্গুলি🔰 অভিনয়েঃ Bikram Chatterjee, Shataf Figar, Zara Khan🔰 দৈর্ঘ্যঃ ১ ঘন্টা ৫৬ মিনিট🔰 আইএমডিবিঃ

Read More »
Ramdhanu The Rainbow (2014)-cinemabaaz.xyz

রামধনু (২০১৪) মুভি রিভিউ

মা, আমি পারলাম না, তোমাকে খুশি করতে পারলাম না। একটি সুইসাইড নোট* এইতো কদিন আগেই এস এস সি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো৷ তার পরবর্তী ২/৩

Read More »
Khaad (2014)

খাদ মুভি রিভিউ

🎬 মুভিঃ খাদ (এডভেঞ্চার)⭕ পরিচালকঃ কৌশিক গাঙ্গুলি⭕ অভিনয়েঃ পল্লবী চ্যাটার্জি, অর্ধেন্দু ব্যানার্জী, মিমি চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, সাহেব ভট্টাচার্য, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, গার্গী রয় চৌধুরী⭕দৈর্ঘ্যঃ ২ ঘন্টা

Read More »