Review Of The Human Condition Trilogy
Films ➮ No Greater Love,
The Road to Eternity, A Soldier’s Prayer
Country ➮ Japan
Genre ➮ War, Drama
Personal Rating ➮ 100/100
গোমিকাওয়ার ছয় খণ্ডের দ্য হিউম্যান কন্ডিশন উপন্যাসকে তিনভাগে বিভক্ত করে পুস্তিকাটির মানবতাবাদী ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বড়ো পর্দায় আনার সুযোগ পেয়েছিলেন বিশাল ধীশক্তিসম্পন্ন জাপানিজ পরিচালক মাসাকি কোবায়্যাশি। কুভাবে শাসিত জাপানিদের অতিষ্ট হওয়া দিকটির সুস্পষ্ট প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পঞ্চাশের দশকে জাপানে উদিত হয়েছিল যুদ্ধের দুষ্কর্ম, সৈন্যদের অবৈধ জুলুম ও সম্প্রসারণবাদী নীতিকে ভৎর্সনা করা বহু চলচ্চিত্রের। সেগুলোর মধ্যে কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক ফিল্মই পেরেছিল দ্য হিউম্যান কন্ডিশনের মতো প্রকৃষ্টতা আয়ত্ত করতে। সিনেমাত্রয় কাযি নামক এক শান্তিবাদী সাধারণ লোকের অসাধারণ জীবনের কাব্য। ধাতু ক্ষনন কোম্পানির কর্মকর্তা থেকে শীঘ্রই তাকে বাধ্যতামূলকভাবে নিযুক্ত হতে হয় সেনাবাহিনীতে। সেনা শিবিরে প্রশিক্ষণ নেয়া থেকে শুরু করে যুদ্ধের ময়দান ও মিলিটারি ক্যাম্পে যুদ্ধবন্দী হিসেবে থাকা পর্যন্ত জীবনের প্রতি পদচারণায় তাকে নরকতুল্য পরিবেশের সাক্ষী হতে হয়। এভাবেই চলতে থাকে কাযির লাগাতার লড়াই করে নিজের আদর্শ বজায় রাখার সংগ্রামের।
হিউম্যান কন্ডিশনকে দৃষ্টিপথে আনা হয় জাপানের ইতিহাস সম্পর্কিত চিত্র হিসেবে, যাতে অঙ্কিত আছে জাপানি সম্প্রসারণবাদ ও সেসময়কার সরকারের সাধিত উগ্র কর্মকাণ্ডগুলো। তিন ফিল্মজুড়েই পাওয়া যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিধ্বনি, যেখানে সৈন্যদের প্রচুর অকৃতকার্যতায় সরকারের নিপাত ও জাপানের বন্দীদশায় পড়ার পরও যুদ্ধের ক্ষিপ্ততা ক্ষান্ত হবার নাম নেয় না। অন্যান্য জাপানিদের ন্যায় কাযিও একই ভাগ্যের অংশী হয়ে পুরো জনসাধারণেরই প্রতীকে পরিণত হয়ে যায়। তার ম্লান চেহারা জাপানের নিদারূণ যন্ত্রণার যেমন সাক্ষ্য দেয় তদ্রুপ তার অভিমতগুলো কষ্ট ভোগ করা জনসাধারণের দেশটির ভালো নিয়তি লাভের আশা পতনের দিকটি প্রস্ফুটিত করে। সৈন্যতে নয়া যোগদানকৃত তরুণদের উন্মত্ততা কিংবা আর্মিদের পশুত্ব— সবই কাযিকে করে ক্ষুদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে জাপানি শাসকবর্গ ও তাদের যুদ্ধের প্রতি নিবেদিত হওয়ার বিরুদ্ধে কখনো দাঁড়ায় না। অগ্রসরমান সমরে নিষ্ঠুরতাগুলো নিয়েই তার যত বিরোধিতা।
সিনেমাগুলোর গল্পের সঙ্গে পরিচালক মাসাকি কোবায়্যাসির বাস্তব জীবনের কাহিনীর রয়েছে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। পূর্বে জাপানের সংবিধান অনুযায়ী সৈন্যদলে যোগ দেয়া বাধ্যতাজনক থাকায় কোবায়্যাসিকে চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে মিলিটারিতে নাম লেখাতে হয়েছিল। প্রায় এক বৎসর তাকে কাটাতেও হয়েছিল আমেরিকানদের অধিকৃত কয়েদখানায়। এজন্য নির্মাণকার্যের বেলায় তিনি নিজেকে পুরোপুরি সিনেমাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছিলেন বলা যায়। চলচ্চিত্রগুলোতে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থাকলেও সেটি ছাড়িয়ে মানুষের মনের কালিমাকেও ছোঁয়, যেটি যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বের প্রতিটা প্রান্তেই দেখা যায়। সিনেমা তিনটিতে অন্ধকারময়তায় ঝাঁপ দেয়া হয় ও আতঙ্ক দ্বারা গ্রাস হবার পর সহ্য ক্ষমতার চরম সীমা ঘুরিয়ে দেখানো। নিয়ে যাওয়া হয় একজন মানুষের মানসিক অবস্থার অভ্যন্তরে যে মন্দভাগ্য থেকে অব্যাহতি পেয়ে প্রণয়শীল মানুষটির কাছে ফিরে যেতে মরিয়া; যুদ্ধের প্রচণ্ড আতঙ্কের মাঝে মনুষ্যত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে রত। তার দৃষ্টিতেই দর্শক ভয়ংকর জগতের সম্মুখীন হয়ে সেটার মোকাবেলায় সামিল হয়।
The Human Condition Trilogy বিমুগ্ধ করে এর বাস্তবধর্মিতা দ্বারা যা তথ্যচিত্রের মতো অনুভূতি দেয় আবার নান্দনিক উৎকর্ষতাও ফ্যাকাশে হতে দেয় না। এর ল্যান্ডস্কেপগুলো ধারণ করা হয়েছে অতুলনীয়ভাবে। তৃণাবৃত প্রান্তর, তুষারময় পরিবেশ, মরুভূমি, পঙ্কিল ভূমি, বৃষ্টির বর্ষণ ও আকাশমণ্ডলের দৃশ্যগুলো পুরোই মোহগ্রস্ত করে দেবার মতো। সিনেমাগুলো এক মানুষের উপর পরমোৎকৃষ্ট আলোকপাত; মানবতাবাদী এই ছায়াছবিগুলো ভাবাবেগময়, ভাববাদী ও বিদ্রোহের চিৎকার। মোট মিলিয়ে দুর্লভ কঠিনতা বহন করা সিনেমাত্রয় মনে নিষ্ক্রমণ ঘটায় অত্যন্ত জোরদার অনুভূতির। কোবায়্যাসির অত্যুত্তম রচনাশৈলীর বদৌলতে তৈরি হিউম্যান কন্ডিশন সেকালের জাপানি চলচ্চিত্রগুলোর এবং সেইসঙ্গে সিনেমা নামধেয় শিল্পের মহত্ত্ব আঁকড়ে ধরার খাঁটি নিদর্শন।
লিখেছেনঃ Yeasin Mehedi