Aamis (2019) সিনেমা রিভিউ
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার।
রাস্তায় নেমেই দেখবে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রতিটি রিকশায়
ছুটে আসছি আমি আর তোমাকে পেরিয়ে চ’লে যাচ্ছি
এদিকে-সেদিকে। তখন তোমার রক্ত আর কালো চশমায় এত অন্ধকার
যেনো তুমি ওই চোখে কোন কিছুই দ্যাখো নি।
হুমায়ুন আজাদ
আচ্ছা, ভালোবাসা কি মানসিক নাকি শারীরিক?
২০১৯ সালে পরিচালক ভাস্কর হাজারিকা অসমীয় ভাষায় নির্মান করেন চলচ্চিত্র আমিষ। অর্ন্তজাল দুনিয়া ঘেটে জানতে পারলাম, বিভিন্ন ফ্যাস্টিবালে অংশগ্রহন করে প্রংশসিত হয়েছিলো আমিষ। সিনেমায় অভিনয় করেন লিমা দাস, অৰ্ঘ্যদ্বীপ বড়ুয়া।
স্বামী, সন্তান নিয়ে সুন্দর সংসার, মধ্য বয়স্কা মহিলা ডাক্তার নির্মালী সাইকিয়ার (লিমা দাস)। কর্মসূত্রে তার স্বামী থাকেন অন্য প্রদেশে। ৫ বছরের ছেলে পিকু আর গৃহকর্মী মিনাকে নিয়ে থাকেন নির্মালী। নির্মালী নিজের ক্লিনিকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পাশাপাশি শহরের এক হাসপাতালেও চাকরি করেন।
এদিকে, পিএইডি শিক্ষাথী সুমন (বড়ুয়া অৰ্ঘ্যদ্বীপ বড়ুয়া)। সুমন মানুষের মাংস খাওয়ার ধরন বা খাদ্যভাস নিয়ে থিসিস করেছেন। সুমন আর তার বন্ধুরা মিলে বনভোজনের আয়োজন করে। সেখানে তারা ছাগলের মাংস দিয়ে ভুড়িভোজ করে। পরদিন সকালে সুমনের এক বন্ধু পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়।
বন্ধুর চিকিৎসার প্রয়োজনে সুমন নির্মালীর ক্লিনিকে যায়। নির্মালীর ক্লিনিক তার বাড়ির নিচতলায়। ক্লিনিক বন্ধ থাকা সত্তেও সুমনের অনুরোধে নির্মালী তার বন্ধুকে চিকিৎসা দেন।
সুমন নির্মালীকে তার বাড়ি অবধি এগিয়ে দিতে আসে। সুমন জানায়, তাদের বন্ধুদের একটা মাংস সংঘ আছে। এই মাংস সংঘে নিজেরাই মাংস কেটে কুটে, রান্না করে খায়। সুমন যখন ফিস দিতে যায়, নির্মালী বলে, এরপর যখন রান্না করবে, সে খাবার যাতে তাতেও দেয়, এটাই হবে তার ফিস। এভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়।
সুমন নির্মালীকে বিভিন্ন স্থানে, রেস্তেরায় মাংস খাওয়াতে নিয়ে যায়। কখনো নিজেও রান্না করে খাওয়ায়। মাংস খাওয়াকে কেন্দ্র করে একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হন।
সুমন আবিষ্কার করে, নিমার্লীর প্রতি প্রেম অনুভব করছেন। এমনকি নিমার্লীও বুজতে পারেন, সে সুমনের প্রেমে পড়ছেন। কিন্ত যেহেতু নির্মালী বিবাহিত আবার নিজের একাকিত্বের কারনে সুমনের সঙ্গও ত্যাগ করতে পারছে না।
সুমন প্রবলভাবে নির্মালীকে ছুঁয়ে অনুভব করতে চান। নিমার্লীও চায় সুমনকে কাছে পেতে। তাদের দুজনের শারীরিক ঘনিষ্ঠতা না হলেও মাংস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সুমন নির্মালীর ভেতরে ঢুকতে চায়।
মাংসে আসক্ত নির্মালীকে সুমন নিজের শরীরের এক টুকরো মাংস রান্না করে খাওয়ায়। সুমনের দেহের মাংস খেয়ে নির্মালী; শারীরিক মিলনের তৃপ্তি অনুভব করেন! যদিও নির্মালী জানতেন না, সুমনের শরীরের মাংস খাচ্ছেন। একসময় সুমন নির্মালীকে জানান, তিনি শরীরের মাংস কেটে নির্মালীকে খাইয়েছেন।
এতে নির্মালী বিরক্ত হয়, বমি করতে চায়! বমি করতে পারে না। কারন সুমনের মাংস খেয়ে যৌন সুখ অনুভব করেছিলেন নির্মালী।
নির্মালীও নিজের শরীরের এক টুকরো মাংস রান্না করে সুমনের জন্য। সুমন বেশ তৃপ্তি করে খায়। যখন জানতে পারে, এটা নির্মালীর শরীরের মাংস। নির্মালী বমি না করলেও সুমন বমি করে!
এদিকে, নির্মালী মানুষের মাংসের আসক্ত হয়ে পরে আরও মাংস খেতে চায়। নির্মালীর জন্য সুমন শরীরেV আরও মাংস কাটতে চায়; কিন্ত তার শরীরে অস্ত্রপ্রচার করা ইলিয়াস তা করতে অস্বীকৃতি জানায়।
নির্মালী হাসপাতালে ডিউটিরত। সে অবস্থায় মাংসের ক্ষুধা অনুভব করে। নির্মালী সুমনকে ডেকে আনেন, যে ভাবেই হোক তার মানুষের মাংস খেতে হবে। নির্মালী সুমনকে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়। নিমালী বলে, এ লাশ সড়ক দূর্ঘটনার মারা গিয়েছে। সুমন সার্জারির ছুরি হাতে নেন। এমন সময় হাসপাতালের এক কর্মচাররি আসলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে আসেন।
সুমন রাতের শহর ঘুরে বেড়ায়। মাংস কাটার জন্য বড় ছুরি কিনে। এক রিকশাচালকে ভাড়া করেন। যাত্রীবেশে সুমন রিকশাচালকে নির্জনে নিয়ে যায়। রিকশাচালকে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যার পর মৃতদেহ ওভারব্রিজের নিচে গিয়ে মাংস কাটতে গেলে পুলিশ সুমনকে ধরে ফেলে।
ভয়াবহ এ খবর সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ হয়ে মানুষের মাংস খাওয়ার গল্প। পুলিশ কাস্টডিডে সুমনও নির্মালীকে পৃথক ঘরে রাখা হয়। আদালতে নেওয়ার সময় তাদের মুখ ঢেকে দেওয়া হয়। গাড়িতে তোলার সময় ফটোসেশন হয়। সেখানে নির্মালী প্রথমবারের সুমনের হাত র্স্পশ করে।
মুখঢাকা সুমন আর নির্মালী তখন পরস্পরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। চারিদিকে পুলিশ, প্রেস, তীব্র আওয়াজ উপেক্ষা করে তারা অনুভব করেন স্বর্গীয় অনুভূতি।
লেখা শুরু করেছিলাম, ভালোবাসা কি মানসিক নাকি শারীরিক; এ প্রশ্ন দিয়ে?
ভালোবাসা আসলে জৈবিক বা শারীরিক ব্যাপার নয়। আবার শুধুমাত্র মানসিক বিষয়ও নয়। এটা একধরনের জৈব-মানসিক (psycho-somatic) প্রক্রিয়া। যদিও বিজ্ঞানীরা গবেষণায় প্রাণ-রসায়নের নানা বিক্রিয়াকেই ভালোবাসা হিসেবে প্রমাণ করেছেন, তবু ভালোবাসার স্থান মানুষের জৈবিক স্তরের উপরে।
আচ্ছা, আপনার কাছে কি মনে হয়?
লিখেছেনঃ Faiaze Ahmed
Facebook page: Cinemabaaz
অন্যান্য মুভি ডাউনলোড ও ব্লগের জন্য ভিজিট করুনঃ Blog