ভালবাসা একটা তারবার্তার মতো। যখন দুইজন মানুষ দুজনকে ভালোবাসে তখন আপনি যাকে মিস করছেন সেই মুহূর্তে ওই মানুষটাও আপনাকে মিস করছে। এটা এক ঐশ্বরিক শক্তি যা খুব সম্ভবত সৃষ্টিকর্তা দুইজন ভালোবাসার মানুষকে দিয়ে থাকেন। এই মুভিটা একটা সাইপ্রেস পাতার তারবার্তা/পাসওয়ার্ড এর গল্প দেখানো হয় যেখানে দুইজন ভালোবাসার মানুষের মাঝে ভালো আছি, খুশিতে আছি, চিন্তা করো না এই কথাগুলো টান্সফার হয় ব্যস একটা সাইপ্রেসের পাতার মাধ্যমে…
Synopsis
মুভির শুরুতেই দেখা যায় একজন সাংবাদিক নামকরা একজন স্বনামধন্য প্রফেসরের কাছে আসে তার জীবনী নিয়ে একটা প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করবে বাট প্রফেসর এতে রাজি হয় না। সাংবাদিক প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করে আপনার জীবনে কি কোন অপূর্ণতা আছে! অপূর্ণতার কথা শুনেই প্রফেসর নস্টালজিক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে প্রফেসর তার জীবনের ফেলে আসা অতীতের কথা বলতে শুরু করে। প্রফেসর ফিরে যায় ১৯৬৯ সালের সেই দিনগুলিতে যখন উনি ছিলেন টগবগে একজন যুবক। সে সময় কোরিয়াতে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে যার প্রতিবাদে সারাদেশে ছাত্র জনতা বিক্ষোভ শুরু করে দেয়। এই বিক্ষোভের পিছনে প্রফেসরের প্রিয় বন্ধু নেতৃত্ব দেয় কিন্তু সুক-ইয়ংয়ের আন্দোলনের পিছনে মৌন সম্মতি থাকলেও সে সরাসরি কখনোই প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়নি। পরবর্তীতে বন্ধুর সাথে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করার জন্য একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামে যায় যেখানে এখন পর্যন্ত শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। সেই গ্রামে বাবা মা হারা জুং-ইন নামের একজন সুন্দরী মেয়ে থাকে যে একটা লাইব্রেরী চালায়। ঘটনাক্রমে একটা পরিত্যক্ত এক বাড়িতে সুক-ইয়ংয়ের সাথে জুং-ইনের দেখা হয়। তাদের প্রথম সাক্ষাতের অভিজ্ঞতাটা ভালো ছিল না। পরবর্তীতে জুং-ইনের চঞ্চলতা, গ্রামের মানুষের প্রতি তার দায়িত্ববোধ, কৃষকদের কাজের ফাঁকে গল্পের বই পড়ে শোনানো, জুং-ইনের একা থাকার একাকীত্বতা যা সুক-ইয়ং’কে মুগ্ধ করে। তারপর ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান হওয়া, একসাথে দুজনের দুষ্টুমি-খুনসুটি করা, দুইজন পাশাপাশি বসে মুভি দেখা যা দুজনের প্রতি দুজনের ভালোলাগা তৈরি হয় আর এই ভালোলাগা দেরি হয় না ভালোবাসায় রুপ নিতে। ক্যাম্পিংয়ের পর সুক-ইয়ং’কে সিউলে ফিরে যেতে হবে বাট সে জুং-ইন’কে একা রেখে শহরে যেতে চায় না। জুং-ইন’কে সাথে করে সিউলে নিয়ে যায় কিন্তু শহরে যাওয়ার পরই সামরিক সরকার কমিউনিস্টের অপবাদ দিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। সুক-ইয়ংয়ের বাবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং ছেলেকে মিথ্যা বলার প্ররোচনা দিয়ে জেল থেকে মুক্ত করে কিন্তু জুং-ইন’কে জেল থেকে বের করার মত কেউ ছিল না।
পরবর্তীতে জুং-ইন কি জেল থেকে বের হতে পারে?
নায়কের বাবা কি মিথ্যা বলার প্ররোচনা নায়ককে দিয়েছিল?
নায়কের সাথে জুং-ইনের দেখা কি হবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে দেখে নিতে পারেন মাস্টারপিস লেভেলের এই মুভিটি…
#অন্যান্য_প্রসঙ্গঃ এই মুভিতে শুধু দুইজন মানুষের ভালোবাসার গল্পের কথাই নয় সাথে ছবির মতো সুন্দর একটা গ্রামের সৌন্দর্যকে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা যারা শহরকেন্দ্রিকে বড় হয়েছি তারা অনেকেই গ্রামের সৌন্দর্য কি তা জানি না। এই মুভিটাতে আপনি দেখতে পাবেন পুরনো দিনের দাদা সাইকেল, আঁকা-বাঁকা মেঠো পথ, গ্রামে বিদ্যুৎ পাওয়ার খুশিতে সকলের মুখে হাসি, তরমুজক্ষেত, ধানক্ষেত, খড়কুটো, কুয়াশা, জলাশয়, কৃষক, পরিত্যক্ত বাড়ি, চাঁদে নীল আর্মস্ট্রং এর হাঁটা, গ্রামের মানুষ মুভিতে কোন রোমান্টিক সীন দেখলে বাচ্চাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে রাখা…মোট কথা গ্রামের এই সকল সুন্দর দৃশ্য আপনার চোখের আরামের কারন হবে। once in a summer মুভিটা আমার অনেক পছন্দের মুভি। মুভির লোকেশন, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সিনেমাটোগ্রাফি এক কথায় অনবদ্য।
#কলাকুশলীদের_নিয়ে কিছু কথা
Lee Byung-Hun: এই মুভিতে সুক-ইয়ংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন I saw the devil, Keys to heart, Ashfall, A single rider, Master, Memories of sword, Inside men, A bittersweet life, G.I Joe: The rise of cobra, Masquerade খ্যাত গ্লোবাল স্টার লি বিউং-হুন। লি বিউন-হুনের সাথে আমার পরিচয় “A bittersweet life” দিয়ে। বেশিরভাগ অ্যাকশন মুভি দেখার কারণে ভাবতাম রোমান্টিক মুভিতে উনাকে গ্রহণ করতে পারব কিনা। তবে আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে এই মুভিটাতে ওনার অভিনীত সুক-ইয়ং চরিত্রটা আমার মনে একটা ছাপ রেখে গেছে।
Soo-Ae: কোরিয়ান ক্রাইম থ্রিলার মুভি Midnight F.M এ প্রথম Soo-Ae কে দেখি। তখন তেমন চিনতাম না তবে বেশ ভালো লেগেছিল। এরপর The Flu, Wedding Campaign দেখি তবে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ওয়ার, ড্রামা, মুভি “Sunny”. যুদ্ধে যোগ দেয়া স্বামীকে এক নববিবাহিতা মহিলা খুঁজে পেতে মরিয়া নারীর চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছিলেন। আমার দেখা Soo-Ae এর সেকেন্ড বেস্ট পারফরমেন্স Once in a summer মুভির জুং-ইন ক্যারেকটারটা। তাছাড়া যারা সাইডরোলে অভিনয় করছেন তারা সবাই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে খুব ভালো অভিনয় করেছে। তো যারা এখনো মুভিটা দেখেননি তারা দেখে নিতে পারেন আর স্বাদ নিতে পারেন রোমান্টিক মেলোড্রমা ভিত্তিক অসাধারণ এক মুভির…
পরিশেষে গিয়ে সুক-ইয়ংয়ের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে কিছু কথা বলতে চাই।
“জীবনের এতটুকু সময় অতিবাহিত করে এসেছি। চাইতাম সারাজীবন তোমাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচব। যদি ঈশ্বর আমাকে কোনোদিন বরদান দিত, তাহলে সেই বরদানে আমি শুধু তোমাকে চাইতাম। যদি হাজারবার অতীতে ফিরে যাবার সুযোগ পেতাম, তবুও আমি তোমাকেই চাইতাম। আজ যখন সত্যের মুখোমুখি হলাম, তখন আমার মনের অনুভূতি কী তা বোঝানো সম্ভব নয়। তবে এটা ভেবে নিজেকে হয়তো সান্ত্বনা দিতে পারব যে, “নাইবা রইলাম একই ছাদের নিচে।
তবুও তো রইবো সারাজীবন এক আকাশের নিচে।”
Movie Info
________________________________________________
Movie: Once in a Summer (2006)
AKA: Geuhae Yeoreum
Director: Jo Geun-Sik
Writer: Kim Eun-Hee, Jo Geun-Sik, Lee Sook-Yun, Son Hyun-Hee, Min So-Yeon
Cinematographer: Lee Yeong-Deok
Genre: Romance
Language: Korean
Country: South Korea
MDL: 7.6
IMDB: 7.3
লিখেছেনঃ Flamy Tuhin